Advertisement
২৫ মে ২০২৪
সব্জি উন্নত মানের, পুষ্টিকরও

জৈবসার ব্যবহারে স্বনির্ভর সাত চাষি

জৈব সারই ওঁদের বীজমন্ত্র। জৈব সার দিয়ে উন্নত মানের এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফসল ফলিয়ে কৃষি দফতরের বাহবা কুড়োচ্ছেন হুগলির বলাগড়ের সাত যুবক।

ঘাস-চাষ। পরে গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।—নিজস্ব চিত্র।

ঘাস-চাষ। পরে গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।—নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত সরকার
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

জৈব সারই ওঁদের বীজমন্ত্র। জৈব সার দিয়ে উন্নত মানের এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফসল ফলিয়ে কৃষি দফতরের বাহবা কুড়োচ্ছেন হুগলির বলাগড়ের সাত যুবক। ওই চাষিদের বক্তব্য, তাঁদের জমিতে উৎপাদিত সব্জি রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত। খেতেও স্বাদু। পুষ্টিকর। তা ছাড়া দোকান থেকে সার কিনতে হচ্ছে না। নিজেদের চাষের সার নিজেরাই তৈরি করে তাঁরা হয়েছেন স্বনির্ভর।

হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের মরাঘাটা-ইছাপুর গ্রামের যুবকেরা বছর কয়েক ধরে গোবর ও কেঁচো দিয়ে সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করা শুরু করেন। তাঁদের দাবি, সার কিনতে না হওয়ায় চাষের খরচ কমে লাভের অঙ্ক বেড়েছে। বুধবার ওই গ্রামে যান রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। জৈব সার দিয়ে চাষ করার জন্য তিনি ওই সাত জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ‘‘অন্য চাষিদের তাঁদের থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত’’ —বলেও মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী।

মরাঘাটা-ইছাপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় সমাদ্দার ২০০৯ সালে জৈব সার দিয়ে চাষের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই বছরের শেষ দিকে দীপঙ্কর মন্ডল, সঞ্জীব মণ্ডল, আশিস সমাদ্দার, দেবাশিস সমাদ্দার, হীরেন্দ্রনাথ পাল, চঞ্চল নায়েক তাঁর সঙ্গে হাত মেলান। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। সঞ্জয়বাবুরা জানান, গোবরের প্রয়োজন মেটাতে তাঁরা গরুপালন করেন। জৈব সার দিয়ে ধান, শশা, কপি, পটল, আলুর পাশাপাশি ঘাস চাষ করা হয়। ঘাস খাওয়ানো হয় গরুকে। এতে গরুর পুষ্টি হয়। গরু বেশি করে দুধও দেয়। কৃষি দফতরের বক্তব্য, সঞ্জয়বাবুদের সাফল্যে এখন এলাকার অনেকেই জৈব চাষের দিকে ঝুঁকছেন। গত বছর চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সুশান্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রেরণায় রূপালি মণ্ডল, বিমলেন্দু মন্ডল, রমেন বিশ্বাস ও নির্মল সমাদ্দার নামে আরও ৪ জন একই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন। এক একটি চাষের ক্ষেত্রে সারের পরিমাণের তারতম্য রয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘প্রথমে বাড়ির পাশে একটি গর্ত করে কলাগাছ, কচুরিপানা, খড়, গোবর পচাই। প্রায় দু’লক্ষ কেঁচো তার মধ্যে দিই। এই মিশ্রণে তৈরি সার দিয়ে বিঘে তিনেক জমি চাষ করি। এতে ফসল উন্নত মানের এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ফসলের রংও ভাল হয়। এর পর থেকে আর অন্য কিছু ভাবিনি।’’ দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রথমে কিছুটা ঝুঁকি হিসেবে জৈব সার ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু প্রথম বারেই আশঙ্কা কেটে যায়। আমাদের তৈরি সব্জি খেয়ে মানুষের শরীরে ক্ষতির কোনও রকম সম্ভাবনা নেই। দিন দিন জৈব সারের সব্জির চাহিদা বাড়ছে এখানে।’’ সঞ্জয়বাবুদের কাছে এখন সাফল্যের রসায়ন শিখতে আসছেন এলাকার অনেক চাষিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Organic manure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE