Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
সন্দেশখালির মেটিয়াখালি বাজারে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব

বিরোধীদের আতঙ্কে রাখতে চলল গুলি-বোমা, মারধর

অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সম্পাদক দিলীপ সর্দার, ন্যাজাট ২ নম্বর অঞ্চলের পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সদস্যা শর্মিলা সর্দার এবং বিজেপির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পুরঞ্জয় ভৌমিক বলেন, ‘‘গুলি বোমা ছুড়ে, ভাঙচুর-লুঠপাট করে তৃণমূলের লোকজন মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারে।’’

বিক্ষোভ: পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। বুধবার সন্দেশখালিতে। ছবি: নির্মল বসু

বিক্ষোভ: পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। বুধবার সন্দেশখালিতে। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তৃতীয় দিনে উত্তপ্ত হল সন্দেশখালি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিরোধীপক্ষ যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে তার জন্য এলাকায় বোমাবাজি করে, গুলি চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে শাসকদলের অশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকী এলাকার ক্লাব, অফিস ও বাড়িতে লুঠপাটও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

এরই প্রতিবাদে বুধবার ভোর থেকে ঝাঁটা-লাঠি হাতে এলাকার মানুষ সন্দেশখালি ১ ব্লকের মেটিয়াখালি বাজার বন্ধ রেখে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ফলে ভেবিয়া চৌমাথা-ন্যাজাটের মধ্যে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল বাহিনী নিয়ে বসিরহাটের এসডিপিও আশিস মৌর্যকে পথে নামতে হয়।

আশিসবাবু বলেন, ‘‘আদিবাসী মানুষ সব সময়ে শান্তিপ্রিয়। কী কারণে তাঁরা উত্তেজিত হলেন তা খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ এলাকায় লোডশেডিং হয়ে যায়। অন্ধকার হতেই বোমা-গুলি ছুঁড়ে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় মেটিয়াখালি বাজারে। ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন দোকানিরা। অভিযোগ, সেই সময় দুষ্কৃতীরা মেটিয়াখালি আদিবাসী তরুণ সঙ্ঘের দরজা ভেঙে টিভি, চেয়ার-টেবিল, ভাঙচুর করে। ভাঙা হয় বিজেপির অফিসের আসবাবপত্রও। তিনটি ছোট গাড়ি ভাঙচুর করে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। দোকান উল্টে ফেলার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারধর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেক তাণ্ডব চালানোর পর এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতীরা।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ভোর ৫টা থেকে এলাকার মানুষ রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি এবং বাঁশ ফেলে অবরোধ করেন। পুলিশ-প্রশাসনকে ‘হায় হায়’ ধ্বনি দিয়ে বিক্ষোভে সোচ্চার হন তাঁরা। এ দিনই তৃণমূলের পতাকা লাগানো শতাধিক বাইক ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তাঁদের দেখে এলাকার ক্ষিপ্ত মানুষ ইট-পাথর ছোড়ে। পুলিশ কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

চিন্ময় সর্দার, অশোক সরকার, সঞ্জয় সরকার, শিবশঙ্কর সর্দাররা বলেন, ‘‘কেউ বিজেপি, কেউ সিপিএম করেন— এই ‘অপরাধে’ শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকা অন্ধকার করে হামলা চালিয়েছে।’’ তাপস মাল, বাচ্চু সর্দার বাবাই সর্দাররা বলেন, ‘‘অনেক নির্বাচন তো হয়েছে এই প্রথম কোনও দলের দুষ্কৃতীরা গরিব আদিবাসীদের উপর হামলা চালাল।’’ ক্লাব থেকে গুলির খোলও মিলেছে বলে তাঁদের দাবি। তবে এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বসিরহাট লোকসভার আহ্বায়ক বাবু মাস্টার বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী জোগাড় করতে না পেরে আমাদের উপর মিথ্যা দোষারোপ করছে।’’

অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সম্পাদক দিলীপ সর্দার, ন্যাজাট ২ নম্বর অঞ্চলের পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সদস্যা শর্মিলা সর্দার এবং বিজেপির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পুরঞ্জয় ভৌমিক বলেন, ‘‘গুলি বোমা ছুড়ে, ভাঙচুর-লুঠপাট করে তৃণমূলের লোকজন মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারে।’’

তাঁদের অভিযোগ, এক ঘণ্টা ধরে দুষ্কৃতীরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু কোনও পুলিশ আসেনি এলাকায়। এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, ঠিক সময়েই পুলিশ
এলাকায় গিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE