Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফুলের রেণু থেকেও বিপত্তি

চোখের আরামই হয় সে দিকে তাকালে। কিন্তু কী বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে সে গাছ, তা নিয়ে ধারণাই নেই বেশিরভাগ মানুষের। 

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

সড়কের দু’পাশে এলাকা জুড়ে গজিয়ে উঠেছে গাছ। তিন-চার হাত লম্বা। ছোট ছোট সাদা ফুল ধরেছে।

চোখের আরামই হয় সে দিকে তাকালে। কিন্তু কী বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে সে গাছ, তা নিয়ে ধারণাই নেই বেশিরভাগ মানুষের।

গাছগুলি পার্থেনিয়াম। গোপালনগর থানার বেলেডাঙা এলাকার গোপালনগর-বাজিতপুর সড়কে ওই ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন দুই যুবক। প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘গাছগুলো ক্ষতিকর বলে শুনেছি। কিন্তু কী হয়, সে সব মাথামুণ্ড জানি না।’’ সাইকেল চালিয়ে ওই এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক চাষি। তিনি বললেন, ‘‘মানুষজন তো মাঝেমধ্যে ওই গাছ কেটে বাড়ি নিয়ে যান জ্বালানি করবেন বলে। এই গাছ থেকে কোনও ক্ষতি হয় বুঝি?’’ শোনা গেল, স্কুল পড়ুয়ারা নাকি ছুটির পরে ওই গাছ থেকে ফুল তুলে বাড়িতেও নিয়ে যায়!

প্রশাসনের তরফে পার্থেনিয়াম নিয়ে তেমন হেলদোল নেই। কোথাও কোথাও স্থানীয় যুবকেরা খোঁজখবর রাখেন। তাঁরা মাঝে মধ্যে পার্থেনিয়ামের ঝোপ কেটে পরিষ্কার করেন। যেমন কিছু দিন আগে করেছিলেন বাগদার সাঁড়াহাটি গ্রামের মানুষ।

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামগুলিতে এখন বন-জঙ্গল সাফাই চলছে। পার্থেনিয়াম মুক্ত করা হচ্ছে এলাকাকে। এর দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেও পদক্ষেপ করা হবে।’’

বনগাঁ মহকুমার বেশ কিছু প্রধান সড়কের ধারেই গজিয়ে উঠেছে পার্থেনিয়ামের ঝোপ। গোপালনগর-নহাটা সড়ক, গোপালনগর-বাজিতপুর, হেলেঞ্চা-সিন্দ্রাণী সড়ক, হেলেঞ্চা-বয়রা সড়ক, রামনগর রোডে পার্থেনিয়ামের ঝোপ দেখা যায়। গ্রামের ছোটখাটো রাস্তার পাশেও দেখা মেলে পার্থেনিয়ামের।

পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে বনগাঁর একটি সংস্থা। গত বছর তারা বিভিন্ন এলাকায় পার্থেনিয়াম কেটে পরিষ্কার করেছিল। সংস্থার তরফে ধৃতিমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘পার্থেনিয়াম কী ক্ষতি করতে পারে, তা বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। ভবিষ্যতে আমরা মানুষকে সচেতন করতে কর্মশালার আয়োজন করব।’’

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বললেন, ‘‘পার্থেনিয়ামের ফুলের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তা মানুষের ফুসফুসে পৌঁছে যা। এর জেরে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, হাঁপানি হয়।’’

গাছের পাতাগুলো গাজর পাতার মতো দেখতে। যেখানে জায়গা পায় সেখানে গজিয়ে ওঠে। মানুষের তো ক্ষতি হয়। গবাদি পশু ও ফসলেরও ক্ষতি হয় এই গাছের জন্য। গরু-ছাগল গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর ও বদহজম হয়। খেতের পাশে গডিয়ে ওঠা পার্থেনিয়ামের দূষণ থেকে ফসলের উৎপাদ‌ন কমতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞদের মত।

এই গাছ পুড়িয়ে ফেললেও রেণু উড়ে গিয়ে অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে। পরিবেশ কর্মীরা জানান, পার্থেনিয়াম গাছ মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দেওয়া উচিত। পার্থেনিয়াম এলাকার মধ্যে দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে বাড়ি এসে গাড়িও ভাল করে ধুয়ে ফেলা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parthenium Flower পার্থেনিয়াম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE