—প্রতীকী ছবি।
থানা পেয়ে যতটা খুশি গোবরডাঙা, ততটাই মন খারাপ হাসপাতালের ঘোষণা না থাকায়।
২০১৭ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক সভায় পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের দুর্বল পরিকাঠামোর কথা তুলে ধরেন। পুরপ্রধানের প্রশ্ন ছিল, হাসপাতাল নিয়ে তিনি এলাকার মানুষকে কী জানাবেন? মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘বলে দেবেন হাসপাতাল হবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সে দিনের কথা নিয়ে চারিদিকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন গোবরডাঙাবাসী। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই দলীয় পতাকা ছাড়া সেই মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায়। ‘গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ ও হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি’র ডাকে এলাকায় বন্ধ পালিত হয়।
সেই কর্মসূচিতে সাড়া পড়ায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হন সুভাষ। তাঁকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। সে সময়ে অবশ্য ‘শারীরিক অসুস্থতা’ই কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন পুরপ্রধান। পরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে সুভাষ তাঁর সঙ্গে দেখা করলে বরফ গলে। ফের পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালের সমস্যা এখনও মেটেনি। পুরপ্রধান আশাবাদী, ভবিষ্যতে হাসপাতালটি নিশ্চয়ই পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার বিষয়ে পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার। যদিও এ দিন তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ‘পৌর উন্নয়ন পরিষদ’-এর সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘থানা হওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু হাসপাতাল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঘোষণা না করায় আমরা হতাশ। তবে আমাদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই কোনও না কোনও পদক্ষেপ করবেন।’’ পরিষদ সূত্রের খবর, হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু করার দাবিতে সম্প্রতি এলাকার হাজার চারেক মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে পোস্টকার্ডে চিঠি দিয়েছিলেন। ‘হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি’-র আহ্বায়ক বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ শহরে চিকিৎসা পরিষেবা বলতে কার্যত কিছুই নেই। দুর্বিষহ অবস্থায় মানুষ দিন কাটাচ্ছেন।’’
গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের অন্তর্বিভাগটি ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে বন্ধ। অতীতে এখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। অস্ত্রোপচার হত। গোবরডাঙা পুরসভা ও সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকার পাঁচ লক্ষ মানুষ ওই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু পড়ে থেকে থেকে হাসপাতালের ভবন, যন্ত্রপাতি সবই নষ্ট হতে বসেছে। বহির্বিভাগে এখন একজন চিকিৎসক সপ্তাহে তিন-চার দিন রোগী দেখেন। তা-ও দিনের কয়েক ঘণ্টা সময়ে। অধিকাংশ সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজনে মানুষকে হাবড়া বা বারাসতে ছুটতে হয়।
মানুষের দাবি, নতুন করে পরিকাঠামো তৈরির কোনও দরকার নেই যেখানে, সেখানে হাসপাতালটি ভাল ভাবে চালু হবে না-ই বা কেন? হাসপাতালটি এক সময়ে ছিল জেলা পরিষদ পরিচালিত। পরে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে তা হস্তান্তর করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। শুধুমাত্র চিকিৎসক ও নার্স পাওয়া গেলেই হাসপাতাল ফের পুরো সময়ের জন্য চালু করা সম্ভব বলে মনে করেন এখানকার মানুষ। কিন্তু সেই দাবি তাঁদের এখনও পূরণ হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy