Advertisement
১১ মে ২০২৪
Bangladesh

দয়া করে দেশে ফিরতে দিন, বলছেন মাসুদুর

বসিরহাটের সোলাদানার নারায়ণপুরের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান গাজি প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে সপরিবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন।

মাসুদুরের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

মাসুদুরের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু ও সীমান্ত মৈত্র
বসিরহাট ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৪:১০
Share: Save:

ভারত-বাংলাদেশ দিয়ে কিছু পণ্য যাতায়াত শুরু হলেও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এ দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরতে পারলেও ও পার থেকে আসতে পারছেন না কেউ। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। হাতে টাকাও নেই। দুর্দশায় পড়েছেন বহু পরিবার। ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়ে এ রাজ্যের শ্রমিকেদের যেমন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল, বাংলাদেশে নানা কারণে গিয়ে আটকে পড়া মানুষজনকেও তেমনই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। একবেলা-আধবেলা খেয়ে কোনও রকম দিন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ। কারও ঠাঁই মিলেছে দোকানঘরে, কেউ আছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কাউকে কাউকে আবার রাত কাটাতে হচ্ছে গাছতলাতেও।

বসিরহাটের সোলাদানার নারায়ণপুরের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান গাজি প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে সপরিবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। এক ভিডিয়ো বার্তায় (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) তিনি জানান, পাসপোর্ট নিয়ে সপরিবার সাতক্ষিরায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। এক মাসের ভিসা ছিল। বাংলাদেশে পৌঁছনোর দু’দিন পরেই ভারতে লকডাউন ঘোষণা হয়। ঘোজাডাঙা সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়। ফলে বাড়ি ফিরতে পারনেনি মাসুদুর। স্ত্রী রাবিয়া খাতুন এবং ছেলে জাহিদুর রহমানকে নিয়ে সে দেশেই আটকে আছেন মাসুদুর। তাঁর কথায়, ‘‘২৫ মার্চ দেশে ফেরার জন্য ভোমরায় এসে জানতে পারি, লকডাউনের জন্য সীমান্ত বন্ধ। সঙ্গে যা টাকা ছিল, তা অনেক দিন আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের মানুষের সাহায্যে কোনও রকমে এক বেলা আধপেটা খেয়ে চলছে।’’

বাংলাদেশের এক ব্যক্তির মোবাইলের মাধ্যমে মাসুদুর জানান, আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন বলছে, বিমানে চলে যেতে। কিন্তু গরিব পরিবারের মাসুদুরের পক্ষে সেই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ভিডিয়ো বার্তায় মাসুদুর বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ভোমরা সীমান্তে যে বাড়ির বারান্দায় আমাদের থাকতে হচ্ছে, তা থেকে ছাড়া ভারতের ঘোজাডাঙা কয়েক হাত দূরে। তবু যেতে পারছেন না দেশে। প্রায় ভিক্ষা করার মতো অবস্থা হয়েছে বলে দাবি মাসুদুরের। যে ভিডিয়োবার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, সেখানে মাসুদুরকে বলতে দেখা যাচ্ছে, ‘‘ভারত সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, দয়া করে দেশে ফিরিয়ে নিন। না হলে ভিন্ দেশে আমাদের মৃত্যু ছাড়া গতি নেই।’’

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন স্বরূপনগর থানার তেঁতুলিয়া এলাকার বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাস। গাইঘাটার ঠাকুরনগর বাজারে তিনি মাছের ব্যবসা করেন। ও দেশে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েছেন। পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গিয়েছিলেন। এখন দেশে ফিরতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। পেট্রাপোলে বন্দরের একটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে ফোন করে ওই ব্যবসায়ী খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কবে দেশে ফিরতে পারবেন।

ওই মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মী বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘‘পরিতোষবাবু আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন, ওখানে এখন তাঁকে মাটি কাটার কাজ করতে হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনেরা ওই কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গেই মাটি কাটার কাজ করছেন তিনিও।’’ বাপ্পা বলেন, ‘‘রোজই বাংলাদেশে আটকে থাকা লোকজন আমাদের কাছে ফোন করে জানতে চাইছেন, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কবেই বা তাঁরা দেশে ফিরতে পারবেন।’’

বাংলাদেশে আটকে থাকা মানুষের পরিবারের লোকজন রোজই পেট্রাপোলে এসে শুল্ক ও অভিবাসন দফতরে এসে খোঁজখবর করছেন। ঢাকা, খুলনা, যশোর, বড়িশাল, গোপালগঞ্জ, বাগেরঘাট, মুন্সিগঞ্জে-সহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয়রা আটকে আছেন। টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গিয়েছে অনেকেরই।

বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কী ভাবে তাঁরা ফিরবেন জানেন না। অনেকে চোরাপথে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। এমনই একজন হালিশহরের গোবিন্দচন্দ্র দাস। বাংলাদেশে আত্মীয় বাড়ি গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। বৃদ্ধ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। উপায় না থাকায় দালাল ধরে দেশে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার সকালে গাইঘাটার আংরাইল সীমান্ত থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পেট্রাপোল বন্দর ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাস থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি বা আটকে পড়া ভারতীয়দের আসা বন্ধ। তবে এ দেশে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধ নেই। লকডাউনের মধ্যেও পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে গিয়েছেন। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র নির্দেশ দিলেই ফের বাংলাদেশে আটকে পড়া মানুষেরা দেশে ফিরতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE