Advertisement
E-Paper

মৃত্যুঞ্জয় বলছি... ফোনই ধরাল জলদস্যুর সঙ্গীকে

কাজটা নেহাতই কাঁচা হয়ে গিয়েছিল। মুক্তিপণের টাকা হাতে সামনে দাঁড়িয়ে অপহৃতদের বাড়ির লোকজন। মোবাইলে নিচু গলায় জলদস্যুদের পান্ডাকে এক শাগরেদ বলছিল— ‘‘হ্যালো... হ্যালো... আতিয়ার ভাই? মৃত্যুঞ্জয় বলছি!’’ এই সূত্রই যথেষ্ট ছিল বাংলাদেশি জলদস্যুদের হাতে তিন মৎস্যজীবীর অপহরণের তদন্তে নামা পুলিশের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩০

কাজটা নেহাতই কাঁচা হয়ে গিয়েছিল।

মুক্তিপণের টাকা হাতে সামনে দাঁড়িয়ে অপহৃতদের বাড়ির লোকজন। মোবাইলে নিচু গলায় জলদস্যুদের পান্ডাকে এক শাগরেদ বলছিল— ‘‘হ্যালো... হ্যালো... আতিয়ার ভাই? মৃত্যুঞ্জয় বলছি!’’

এই সূত্রই যথেষ্ট ছিল বাংলাদেশি জলদস্যুদের হাতে তিন মৎস্যজীবীর অপহরণের তদন্তে নামা পুলিশের কাছে। মুক্তিপণের টাকা মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে তুলে দিতে গিয়ে বসিরহাটের কলেজপাড়ায় তার বাড়িও চিনে এসেছিলেন অপহৃতের পরিবারের লোকজন। শুধু অপেক্ষা ছিল, কখন ভালয়-ভালয় ডাকাতদের খপ্পর থেকে ফিরে আসেন ক্যানিং ও বাসন্তীর তিন অপহৃত মৎস্যজীবী সামাদ মোল্লা, মুছা মোল্লা ও বাপ্পা রপ্তান।

গত বুধবার গোসাবার চাঁদখালির কাছে বাংলাদেশ-লাগোয়া এলাকায় তিনটি ভারতীয় ট্রলারে হামলা চালায় জলদস্যুরা। ২৫ মৎস্যজীবীকে ছেড়ে দিলেও ৩ জন অপহৃত হয়েছিল। মুক্তিপণ নিয়ে বিস্তর দর কষাকষির পরে শুক্রবার বসিরহাটে গিয়ে সামাদের ছেলে খালেক-সহ তিন জন মৃত্যুঞ্জয় নন্দীকে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে আসেন। রবিবার ভোরে একটি ডিঙি নৌকোয় উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর থানায় ফেরেন তিন মৎস্যজীবী। পরে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

অপহৃতদের পরিবার সূত্রের খবর, থানা-পুলিশ করলে সকলকে জানে মেরে দেওয়া হবে বলে জলদস্যুরা হুমকি দিয়েছিল। সেই ভয়ে ওই তিন পরিবারের কেউই পুলিশকে লিখিত ভাবে কিছু জানাননি। মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আগ বাড়িয়ে পদক্ষেপ করেনি পুলিশও। কিন্তু মৎস্যজীবীরা নিরাপদে ফিরে আসার পরেই তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

রবিবার রাতেই সাদা পোশাকে বাহিনী নিয়ে বসিরহাটে পৌঁছে যান ক্যানিং থানার সিআই রতন চক্রবর্তী ও ছোটমোল্লাখালি কোস্টাল থানার ওসি হিমাংশু বিশ্বাস। কলেজ মোড়ে নিজের বাড়িতে বসে তখন কাপড়ের ব্যবসার কাজ করছিল বছর চল্লিশের মৃত্যুঞ্জয়। কড়া নাড়া শুনে তার স্ত্রী দরজা খুলে দিতেই পুলিশকর্মীরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুঞ্জয় ধরা পড়ে যায়। রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোস্টাল থানায়। সোমবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

তদন্তকারীদের দাবি, বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে বসিরহাটে এসে থাকতে শুরু করে মৃত্যুঞ্জয়। কাপড়ের ব্যবসায়ী বলেই লোকে তাকে চিনত। কিন্তু আড়ালে বহু দুষ্কৃতীর সঙ্গে সে যোগাযোগ রেখে চলছিল। জলদস্যু আতিয়ারেরও বাড়ি সাতক্ষীরায়। সেখানে তার এসটিডি বুথও আছে। মৃত্যুঞ্জয় নিজে সরাসরি ‘অ্যাকশনে’ না নামলেও দুষ্কৃতীদের নানা ভাবে সাহায্য করে সে ‘কমিশন’ পেত। এ বারের অপহরণে মুক্তিপণের টাকা ইতিমধ্যেই সে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এদের সাহস বাড়তে-বাড়তে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে মৃত্যুঞ্জয় কার্যত কোনও গোপনীয়তার ধারই ধারেনি। সেই আহাম্মকীরই খেসারত দিল সে।’’ মৃত্যুঞ্জয়কে জেরা করে বাকি দুষ্কৃতীদেরও ধরার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Pirate bangladesh india phone caning Police basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy