Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

হাবরায় নজরে ভাড়াটে

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকছে। আপনাদের কাছে কোনও তথ্য থাকছে না কেন!

খোঁজ-খবর: বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

খোঁজ-খবর: বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসে যারা ঘাঁটি গেড়ে বসে, তাদের না থাকে বৈধ পরিচয়পত্র, না সে সব খতিয়ে দেখার কথা ভাবেন বাড়ির মালিক। হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলেই ভাড়ার বাড়ি জুটে যায় এই সব অনুপ্রবেশকারীদের। অনেক দুষ্কৃতীও এ ভাবে আস্তানা গাড়ে। এ দেশে কুকর্ম সেরে আবার কেউ পালিয়ে যায় বাংলাদেশে, এমন নজির বহু আছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে। রাজ্যের অন্য প্রান্তে অপরাধ করে উত্তর ২৪ পরগনায় বাসা ভাড়া নিয়েছে বাংলাদেশিরা, এই তথ্যও আছে পুলিশের কাছে।

কিছু দিন আগে পুলিশ হাবড়া থানার মছলন্দপুর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি বাড়ি থেকে এক বাংলাদেশি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছিল। সে বসিরহাটে ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল। পরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে হাব়ড়ায়। ফুলতলা এলাকার একটি বাড়ি থেকেও তিন বাংলাদেশি ভাড়াটিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল কিছু দিন আগে।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকছে। আপনাদের কাছে কোনও তথ্য থাকছে না কেন! মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরে নড়েচড়ে বসেছে হাবড়া থানার পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, এমনও দেখা যায়, চোরাপথে দালালেরা বাংলাদেশিদে নিয়ে এসে ভাড়াবাড়িতে কিছু দিনের জন্য রেখে দেয়। পরে সুযোগ বুঝে তাদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। বেশির ভাগ সময়ে এলাকায় নতুন আসা ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য থাকে না। বাড়ির মালিকও তাদের পরিচয় তেমন রাখেন না। ভুল তথ্য দিলে তা যাচাই করার কথা ভাবেন না বেশির ভাগ বাড়ির মালিক। ভাড়াটিয়ারা কোনও অপরাধ করে পালিয়ে গেলে তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

এ বার এলাকায় নতুন আসা ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে হাবড়া থানার পুলিশ। প্রতি দিন নিয়ম করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা ভাড়াটিয়াদের পরিচয় জেনে আসছেন। সচিত্র পরিচয়পত্রের ফোটোকপি, মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাড়ির মালিককে বোঝানো হচ্ছে, বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া এলে যেন তাঁর পরিচয় জেনে পুলিশকে জানিয়ে রাখা হয়। তা না করলে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাবড়া থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরের লোকজন নতুন ভাড়াটে এলে তা-ও অনেক সময়ে খবর দেন। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় তেমন চল কার্যত নেই।

কয়েক বছর আগে গাইঘাটার একটি বাড়িতে চড়াও হয়ে বাড়ির লোকজনকে বেঁধে দুষ্কৃতীরা লক্ষাধিক টাকা লুঠ করে পালায়। ওই ঘটনার বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছিল। তারাও এলাকায় একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। অতীতে এমনও দেখা গিয়েছে, বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগর, হাবরা, মছলন্দপুর, গুমা, বিড়া-সহ বিভিন্ন রেলপাড় এলাকায় দুষ্কৃতীরা এসে ভাড়া থেকে বা আশ্রয় নিয়ে অপরাধমূলক কাজ করেছে।

পুলিশ জানায়, বাংলাদেশিরা এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করে এখানকার বাসিন্দা বনে যায়। অনেক সময়ে দেখা যায়, ধরা পড়া বাংলাদেশিও এ দেশের পরিচয়পত্র দেখাচ্ছে।

হাবড়ার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাড়াটিয়া হিসাবে আত্মগোপন করে থাকা যে কোনও ধরনের দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করাই আমাদের উদ্দেশ্যে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police tenant Identification
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE