Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

উচিত কাজ, মনে করছে গোসাবার বিরোধী শিবির

কর্মী সম্মেলনের নামে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়াচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।

টহল: দেগঙ্গার গ্রামে আধা সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

টহল: দেগঙ্গার গ্রামে আধা সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

প্রসেনজিৎ সাহা 
গোসাবা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ০৭:৪৪
Share: Save:

কেউ হিসেব কষতে বসেছেন, কী এমন ঘটল, যে কারণে একটা কেন্দ্রের জন্য একজন ব্যয় পর্যবেক্ষকের দরকার পড়ল। কেউ আবার বলছেন, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। টাকা ছড়ানোর খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। কারও মতে, বিজেপি এ বার রাজ্যে ক্ষমতা পেতে মরিয়া। তাই এক দিকে যেমন ভোট হচ্ছে আট দফায়, তেমনই শুধুমাত্র একটি কেন্দ্রের জন্য দরকার পড়ছে একজন বিশেষ পর্যবেক্ষক। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনও আসলে রাজনীতিরই খেলা।

চুম্বকে, একটি কেন্দ্রের জন্য একজন ব্যয় পর্যবেক্ষক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর সরগরম গোসাবার ভোটের বাজার।

রাজ্যে প্রথম দু’দফার ভোট হচ্ছে মোট ৯টি জেলার ৬০টি আসনে। ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ১৮ জন ব্যয় পর্যবেক্ষক বা এক্সপেন্ডিচার অবজারভার নিয়োগ করেছে কমিশন। এক একজন পর্যবেক্ষকের তত্ত্বাবধানে তিন-চারটি করে বিধানসভা কেন্দ্র থাকলেও শুধুমাত্র গোসাবা বিধানসভার জন্য একজন ব্যয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই গোসাবা বিধানসভা এলাকায় বিজেপি বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। একাধিক পঞ্চায়েতে বিজেপি সদস্য জয়লাভ করেন। ভোট মিটতেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামে শাসক শিবির। একের পর এক পঞ্চায়েত এলাকায় নিজেদের সংগঠন মজবুত করার কাজ শুরু করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আয়লা বা বুলবুলের পরে সরকারি ক্ষতিপূরণ বিলি-বণ্টনের পাশাপাশি গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাতে বিতর্কও বাধে। খাবার, জামাকাপড় যে ভাবে বিলি হয়েছে, তাতে বিরোধীরা ‘ভোট কেনার’ গন্ধই পেয়েছিলেন। রাঙাবেলিয়া পঞ্চায়েত-সহ বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় যেখানে বিজেপি সামান্য ভাল ফল করেছিল, সেখানে বেশি করে শাড়ি-পাঞ্জাবি-শীতবস্ত্র বিলি হয়েছে গত কয়েক মাসে।

কর্মী সম্মেলনের নামে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়াচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। ভোট আরও যত এগিয়ে আসবে, ততই অর্থের বিনিময়ে, নানা ধরনের সামগ্রী পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে শাসকদল ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির। সে কারণেই একজন ব্যয় পর্যবেক্ষকের হাতে কেবলমাত্র এই একটি কেন্দ্রে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, মনে করছেন বিরোধীরা।

গোসাবার বিজেপি নেতা সঞ্জয় নায়েক বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ভোটারদের পয়সা, জামাকাপড় দিচ্ছেন জয়ন্ত নস্কর। ব্রাহ্মণসেবার নাম করে হাজার হাজার মানুষকে বাড়িতে ডেকে শাল, জামাকাপড়, নগদ টাকা হাতে গুঁজে দিয়েছেন। ভোট যত এগিয়ে আসবে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে। তাই কমিশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।” গোসাবার আরএসপি নেতা সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই তৃণমূল ভোটারদের পয়সার বিনিময়ে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। বিভিন্ন মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকাও ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে শুনেছি। ফলে কমিশন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই।’’

কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে সে ভাবে মন্তব্য করতে চাননি জয়ন্ত। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন যে ভাবে পারে ভোট করুক। এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল অন্তত পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে জিতবে।’’ প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে নিজের হয়ে নিজেই দেওয়াল লিখতে দেখা গিয়েছে জয়ন্তকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ডুমুরের ফুল নই যে ভোট এলেই মানুষের মাথায় ছাতা ধরি। সারা বছর আমি মানুষের পাশে থাকি। ঝড়, বন্যা সব কিছুর হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করা আমার কর্তব্য বলে মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE