Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বৃষ্টি পড়লেই ছুটি...ছুটি

বৃষ্টি হলেই স্কুল ছুটি।শহুরে ‘রেইনি ডে’-র ছুটি নয়। নেহাত দায়ে পড়েই স্কুলে আসতে বারণ করে দেওয়া আছে ছেলেমেয়েদের। কারণ, ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের খড়ের চালার তলায় গাদাগাদি করে বসার ব্যবস্থা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১২৯ জন পড়ুয়ার।

এই ঘরেই চলে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

এই ঘরেই চলে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

বৃষ্টি হলেই স্কুল ছুটি।

শহুরে ‘রেইনি ডে’-র ছুটি নয়। নেহাত দায়ে পড়েই স্কুলে আসতে বারণ করে দেওয়া আছে ছেলেমেয়েদের। কারণ, ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের খড়ের চালার তলায় গাদাগাদি করে বসার ব্যবস্থা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১২৯ জন পড়ুয়ার। দেওয়াল-টেওয়ালের বালাই নেই। পলিথিনের টুকরো ফালা ফালা হয়ে ছিঁড়ে শোভা বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টির ছাঁটে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভিজে একসা হবে, ছুটির কথা তাই আগেই বলা থাকে।

যেখানে ক্লাস চলে, জায়গাটা দূর থেকে দেখলে মনে হবে, গোয়াল ঘর কিংবা হদ্য গাঁয়ের পোড়ো আটচালা। বাঁশের কাঠামোর উপরে টালির চাল। মেঝে জলে-কাদায় ভরা।

সংক্ষেপে: মগরাহাট ২ ব্লকের রাধানগর মুসলিমপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের হাল। সরকার স্কুলছুট কমাতে এবং সকলকে স্কুলের আওয়াত আনতে যখন বদ্ধপরিকর, তখন এ হেন ব্যবস্থা চললে পড়ুয়ারা কত দিন আগ্রহ ধরে রাখতে পারবে, প্রশ্ন সেটাই। গ্রামে কোনও প্রাথমিক স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে এমন শিশুশিক্ষা কেন্দ্রেই ছেলেমেয়েদের পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা।

এ হেন স্কুলেও সরকারের কোষাগারের টাকায় কেনা জুতো পেয়েছে পড়ুয়ারা। তা-ও আবার বর্ষা নামার ক’দিন আগেই। সাহিল শেখ, রুকসা খাতুন নামে দুই খুদে পড়ুয়া বলে, ‘‘ওই জুতো আর পায়ে দিতে পারলাম কবে। স্কুলের মেছেতে জল জমে থাকে। মা বলেছে, শীতকালে জুতো পরতে দেবে।’’

ব্লকের মগরাহাট পূর্ব পঞ্চায়েতে মুসলিমপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি ২০০০ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। গ্রামের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই। ফলে অনেক অভিভাবককেই এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। অনুমোদন পাওয়ার পরেও অবশ্য ভবন পায়নি স্কুল। এখানে ওখানে বা পাড়ার আটচালায় পঠন-পাঠন চলত।

তাতেও বাড়ছিল পড়ুয়ার সংখ্যা। বছর তিনেক আগে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য গ্রামের এক ব্যক্তি ৬ শতক জমি দান করেন। গ্রামের লোকজন নিজেদের টাকায় বাঁশের কাঠামো তৈরি করে, তার উপরে টালি চাপিয়ে কোনও মতে একটা কাঠামো খাড়া করেন। ভাবা গিয়েছিল, সরকার শিক্ষাকেন্দ্রের অনুমোদন যখন দিয়েছে, ভবন তৈরির টাকাও নিশ্চয়ই মিলবে। কিন্তু কোথায় কী! গত তিন বছর ধরে চলছে এই পরিস্থিতি।

কিছুটা নিচু এলাকা হওয়ায় ফি বছর বর্ষায় ঘরের মধ্যে জল ঢুকে যায়। মাটির মেঝেতে জল জমে। থিক থিক করে কাদা। পাশেই কিছুটা জলে ডুবে থাকায় আবর্জনা পচার দুর্গন্ধে নাজেহাল হয় পড়ুয়া, শিক্ষিকারা। এই পরিস্থিতিতে কিছু দিন চলার পরে বাধ্য হয়ে অন্যত্র সরিয়ে চালানো হচ্ছে পড়াশোনার কাজ। সেখানেও খড়ের চালের ছোট ঘর। ছেলেমেয়েদের বসার পরে শিক্ষিকাদের আর বসার জায়গা থাকে না। চার শিক্ষিকা চালা ঘরের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসেন। আর বৃষ্টি পড়লেই ছুটি, বিলক্ষণ জেনে গিয়েছে খুদে পড়ুয়ারা। বৃষ্টি হলে মিড ডে মিলের রান্নাও বন্ধ। অন্য সময়ে পাশাপাশি রান্না ঘর থেকে ধোঁয়া ঢুকেও কষ্ট পায় ছেলেমেয়েরা।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মগরাহাট পূর্ব পঞ্চায়েতের সদস্য মান্নান শেখ ও কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা সাহিদান বিবির অভিযোগ, ভবন নির্মাণের জমি পেলেও সরকারি আর্থিক সাহায্যের অভাবে স্কুল ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। সমস্ত বিষয়ে একাধিকবার ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

মগরাহাট ২ বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নেব। তারপরে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poor condition School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE