Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

বারাসতের বহু উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেন ‘নেই রাজ্যের’ প্রতীক

এমনিতে করোনার প্রকোপ চলছে। অন্য দিকে বর্ষায় শুরু হয়েছে ডেঙ্গির আতঙ্ক।

অব্যবস্থা: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরে ভর্তি ঘাস, আগাছা। ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশুও। বারাসতের কদম্বগাছি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অব্যবস্থা: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরে ভর্তি ঘাস, আগাছা। ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশুও। বারাসতের কদম্বগাছি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

নামেই উপ-স্বাস্থকেন্দ্র। কিন্তু অস্বাস্থ্যের ছাপ পরতে পরতে।

কোনওটি সপ্তাহে পাঁচ দিনই বন্ধ থাকে। কোনওটি খোলা থাকলেও চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ওষুধ দেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কোথাও আবার শৌচাগারও নেই। খোলা জায়গায় কিংবা জঙ্গলে ছুটতে হয় মহিলাদের। কোথাও আবার ভিতরে চরে বেড়ায় গরু-ছাগল। কলকাতার কাছেই বারাসত শহরের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির এমনই দুরবস্থা।

এমনিতে করোনার প্রকোপ চলছে। অন্য দিকে বর্ষায় শুরু হয়েছে ডেঙ্গির আতঙ্ক। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির কাছাকাছির উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির এমনই বেহাল দশা যে রোগীরা জেলা বা কলকাতার হাসপাতালে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন।

বারাসত থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে রয়েছে কদম্বগাছি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জঙ্গল ও আগাছায় ভরা চিকিৎসাকেন্দ্রের ভিতরে চরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশু। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ২০টি শয্যা বিশিষ্ট ওই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা এক সময়ে ভালই ছিল। সরকারি স্তরে অবহেলা আর উদাসীনতায় সেটিতে এক সময়ে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়।

গত বছর বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের সাংসদ তহবিলের টাকায় ওই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নতুন একটি ভবন তৈরি হয়। সেখানে মহিলা ও পুরুষদের জন্য ফের দশটি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সেই নতুন ভবন বন্ধ। রোগী ভর্তি রাখার পরিকাঠামোই নেই সেখানে। রোগীদের অভিযোগ, এক জন চিকিৎসক মাঝেমধ্যে আসেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক জন নার্স দিয়েই বহির্বিভাগের কাজ চলছে।

কদম্বগাছির সর্দারপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল সর্দার বলেন, “জঙ্গল থেকে সাপ বেরিয়ে পড়তে পারে ভেবে চিকিৎসা করাতে এসে ভয়ে ভয়ে থাকি।”

দেখা গেল, চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী দূর থেকে রোগীদের সমস্যার কথা শুনছেন। একটি লাঠির ডগায় হাতার মতো ঢাকনা লাগানো। সেই ঢাকনায় করে রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন। পাশে বসে এক নার্স। দাদপুর থেকে আসা খোকরজান বিবি বলেন, “বয়স হয়েছে। সুগার, রক্তচাপ বেড়েছে। হাসপাতালে দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার নেই। ওরাই লাঠি দিয়ে শাড়ির আঁচলে ওষুধ দিল।” ইসলামপুর থেকে এসেছিলেন সফিয়া বিবি। তিনি বলেন, “করোনার জন্য গাড়ি না থাকায় দূরে বারাসত হাসপাতালে যেতে পারছি না। তাই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার না থাকলে কর্মীদের দিয়ে কি চিকিৎসা হয়?”

দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়া ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেল মহিলাদের জন্য বরাদ্দ একমাত্র শৌচালয়টি আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। এক মাস পরেও সেটি ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মহিলারা ছাড়াও রক্ত ও নানা পরীক্ষা করাতে আসেন অনেকে। বামনগাছির বাসিন্দা রহিমা বিবি বলেন, ‘‘শৌচালয় বন্ধ থাকায় পাশের জঙ্গলে যেতে হচ্ছে। কী সমস্যায় যে মহিলারা রয়েছেন বোঝানো যাবে না।’’

চিকিৎসকের অভাবে সপ্তাহে পাঁচ দিনই বন্ধ থাকে বামনগাছির মালিয়াকুড় উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামান্য কেটে গেলেও সেখানে গিয়ে চিকিৎসা মেলে না। দিন দুয়েক আগে খেলতে গিয়ে হাতে চোট পান মালিয়াকুড়ের রমজান হাসান। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় তাঁকে। রমজানের পরিবার ও এলাকার মানুষের অভিযোগ, জ্বর, সর্দি কিংবা বমির মতো ছোটখাটো সমস্যাতেও বাড়ির কাছে স্থানীয় উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা মেলে না। করোনার আতঙ্কের মধ্যে ছুটতে হচ্ছে বারাসত বা কলকাতার হাসপাতালে।

এ বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন সাহা বলেন, “লকডাউনের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কিছু সমস্যা হয়েছে। অনেকে কাজে আসতে পারেননি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। মানুষও সেখানে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। বাকি সমস্যাগুলিরও দ্রুত সমাধান করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Health Center Barasat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE