Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গিতে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বার

রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে রাজ্যে যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৬ জনই উত্তর ২৪ পরগনার।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১১
শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বামী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বামী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

পুলিশে চাকরি পাওয়ার পরেই বিয়ে। এখনও বিয়ের বছর ঘোরেনি দেগঙ্গার চাকলার সিভিক ভলান্টিয়ার রামচন্দ্র দাসের। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁদের সন্তান হবে বলে সময় দিয়েছিলেন চিকিৎসক। খুশির আমেজ। কিন্তু এমন সময় ডেঙ্গি ঝড়ে সব তছনছ হয়ে গেল।

রবিবার রাতে ডেঙ্গিতে মারা গেলেন রামচন্দ্রবাবুর দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না দাস (২৫)।

রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে রাজ্যে যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৬ জনই উত্তর ২৪ পরগনার। ডেঙ্গি ও জ্বরে নতুন করে দেগঙ্গারই ৪ জন এবং নৈহাটি ও হাবরার ১ জন করে মারা গিয়েছেন। তবে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সোমবার তৎপরতা দেখা যায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। রবিবার ভোরে থেকেই দেগঙ্গার কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রাম পরিদর্শন করেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরাও। স্বাস্থ্য শিবিরে গিয়ে জেলাশাসক চিকিৎসা পরিষেবা আরও দ্রুত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কতদূর কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।

রত্নাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, হঠাৎ জ্বর আসে দেগঙ্গার উত্তর সুবর্ণপুর দাসপাড়ার রত্নার। গত সোমবার বারাসত জেলা হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। বুধবার রত্নাকে ছুটি দিয়ে দেন চিকিৎসক। রত্নার স্বামী দেগঙ্গার সিভিক ভলান্টিয়ার। রামচন্দ্র দাস বলেন, “বুধবার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ফের বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করি। পরদিন আরজিকরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ রামবাবুর ভাই শ্যাম দাস বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে আমাদের জানানো হয়, রোগীর অবস্থা খারাপ। বাচ্চা মারা গিয়েছে। ডেঙ্গি হওয়ায় বৌদির মৃত বাচ্চা বের করা যাবে না। তাতে অধিক রক্তক্ষরণ হয়ে দু’জনেরই মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।’’ অভিযোগ, ওই ভাবেই ফেলে রাখা হয় রত্নাদেবীকে। রবিবার রাতে মারা যান তিনি। সোমবার সকালে গ্রামে দিয়ে দেখা যায়, রত্নার শাশুড়ি বিমলা দাস মৃতদেহ জড়িয়ে কাঁদছেন। বলছেন, “কত স্বপ্ন ছিল ছেলে ও বৌমার, প্রথম সন্তান হবে। ডেঙ্গি একসঙ্গে দু’জনের প্রাণ কেড়ে নিল।’’

চাঁপাতলা পঞ্চায়তের কেয়াডাঙা মাঝেরপাড়ার রমজান আলি (৪৪) সাতদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। স্থানীয় ডাক্তারের কাছেই চিকিৎসা চলছিল। রবিবার সন্ধ্যায় রমজানের পেট ফুলে যায়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। রমজানের দাদা আমির হোসেন এ দিন বলেন, ‘‘স্থানীয় চিকিৎসকের কথা শুনে বাড়িতে না রেখে সরকারি হাসপাতালে আগে নিয়ে গেলে হয়ত ভাই বেঁচে যেত।’’

আমুলিয়া পঞ্চায়েতের চাঁদপুর গ্রামের মাবিয়া বিবিকে (৫০) স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার পাশাপাশি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রবিবার জানা যায়, তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে। বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাতেই মারা যান মাবিয়া। মাবিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম এ দিন বলেন, ‘‘মাত্র তিন দিনের জ্বরেই সব শেষ হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি।’’

দেগঙ্গা ২ পঞ্চায়েতের কলিযুগা গ্রামের আমেনা বিবির (২৩) জ্বর হলে মঙ্গলবার বারাসত হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয় আইডি হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে ফের সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় নীলরতন সরকার হাসপাতালে। স্বামী কুবরিয়া হোসেন জানান, আমেনার প্লেটলেট কমে যাওয়ায় অবস্থার অবনতি হয়। রবিবার দুপুরে মারা যান আমিনা বিবি। কুবরিয়ার অভিযোগ, ‘‘ডাক্তার বলে গেলেও আমার স্ত্রীকে অক্সিজেন ও সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি। না হলে ও মারা যেত না।’’

এর পাশাপাশি হাবরা থানার আয়রা এলাকার বাসিন্দা হাজিরা বিবি (৬৭) জ্বর নিয়ে বারাসতের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। রবিবার রাতে সেখানেই মারা যান তিনি। রবিবার সকালে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় নৈহাটির সঞ্জীব চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা ভিকি সাউয়ের (২৯)। বাড়ির লোক জানিয়েছে, কিছুদিন ধরেই জন্ডিসে ভুগছিলেন ওই যুবক। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি হয়েছিল বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। ওই এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বর ও ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

Pregnant Dengue Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy