বার বার ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বাঁধ ভেঙেছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে। নোনাজল ঢুকে নষ্ট হয়েছে চাষের জমি। ভিটেমাটি হারিয়েছেন বহু মানুষ। শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কটালেও প্রায়ই অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে পড়ে। চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ সে ভাবে প্রভাব না ফেললেও গোটা সুন্দরবন জুড়ে বাঁধের দুরবস্থার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে আতঙ্ক কাটছে না মানুষের।
এই পরিস্থিতিতে গোটা সুন্দরবন এলাকা জুড়ে স্থায়ী নদীবাঁধের দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষ। সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটির তরফে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার এই দাবি নিয়ে কমিটির তরফে রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা, সাগর-সহ বহু এলাকায় এই কমিটির সদস্যেরা নদীবাঁধে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ করেন।
২০০৯ সালে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আয়লায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার কেন্দ্র সরকারের দ্বারস্থ হলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় ৫০৩২ কোটি টাকা মঞ্জুর হয় সুন্দরবনে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের জন্য। প্রাথমিক ভাবে ৬০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। এছাড়া বাঁধ তৈরিতে রাজ্য সরকারও ১০ শতাংশ টাকা দেবে বলে কেন্দ্রকে জানিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র জানিয়ে দেয় রাজ্যকে অন্তত ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। সুন্দরবনবাসীর কথা মাথায় রেখে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওই প্রস্তাবে রাজি হন। পরবর্তী আরও দু’টি পর্যায়ে মোট ১৪০০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। তবে শর্ত ছিল, তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ তৈরির জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই টাস্ক ফোর্সে কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার, রাজ্যের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার, সুন্দরবন বিশারদ তুষার কাঞ্জিলালের মতো মানুষজনকে রেখে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। এরপর কেন্দ্রের টাকা আসতেই শুরু হয় বাঁধ নির্মাণের কাজ।