Advertisement
০১ মে ২০২৪

৩০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে কলেজে

দিনমজুর পরিবারের সন্তান গরানকাঠি গ্রামের শঙ্কর রাউত। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি কোনও কলেজ না থাকায় স্নাতক স্তরে আর পড়াই হল না তাঁর। শুধু ওই তরুণই নয়, একই কারণে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ফলতার অনেকেরই পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

দিলীপ নস্কর
কুলপি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

দিনমজুর পরিবারের সন্তান গরানকাঠি গ্রামের শঙ্কর রাউত। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি কোনও কলেজ না থাকায় স্নাতক স্তরে আর পড়াই হল না তাঁর। শুধু ওই তরুণই নয়, একই কারণে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ফলতার অনেকেরই পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এই এলাকায় কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কাজ কিছুই এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কলেজ না থাকায় কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে কলেজে পড়তে যান। কিন্তু যাতায়াতের খরচ যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। তাই মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন অনেকেই। আবার অনেকে পড়া ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যান কাজের খোঁজে।

কুলপি ব্লকের মধ্যে রয়েছে ১৪টি পঞ্চায়েত। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। ওই ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে রামনগর-গাজিপুর, কামারচক, ঈশ্বরীপুর, রাজারামপুর, রামকৃষ্ণপুর এই ছ’টি পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর, হিনচিনবেড়িয়া, ধনুমণ্ডল, কালীতলা, মনোহরপুর, গরানকাঠি-সহ ৩০-৪০টি গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য কোনও কলেজ নেই। কলেজে পড়তে হলে তাঁদের তিরিশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে যেতে হয় ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজ বা কাকদ্বীপ কলেজে। যা এখানকার ছেলেমেয়েদের অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

এমনিতেই গ্রামের রাস্তাঘাট সে ভাবে উন্নয়ন হয়নি। অনেক গ্রামে এখনও বিদ্যুৎও পৌঁছয়নি। ফলে সন্ধ্যার সময়ে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তাই আর সাহস করে অভিভাবকেরা মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য দূরের কলেজগুলিতে পাঠাতে চান না। এই কারণেই গ্রামগুলির বেশির ভাগ মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে হয়ে যায় বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।।

গাজিপুর এলাকার সামসেল মোল্লা, রহিচ গাজি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে মূল জাতীয় সড়ক মোড়ে বাস ধরতেই সময় লাগে প্রায় ৩৫ মিনিট। তারপর বাসে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ফকিরচাঁদ কলেজে পৌঁছতে হয়। তাই এত দূরে ছেলেমেয়েদের কলেজে পাঠাতে সাহস পাই না।’’ ওই এলাকার ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘রাতে বাড়ি ফেরা খুব মুশকিল। গাড়িও থাকে না।’’

বাসিন্দারা জানায়, কুলপি এলাকায় একটা কলেজের দাবি বহু বছর ধরে। আর প্রত্যেক বারের ভোটের মুখে সব দলের নেতারা কলেজ তৈরির আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোট মিটলেই সব শেষ। এ বারও কলেজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গলা ফাটিয়েছেন প্রার্থীরা। গ্রামে প্রচারে গিয়ে কলেজ তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন।প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শকুন্তলা পাইক বলেন, ‘‘আমাদের সময় অনুমোদনের তালিকায় কলেজ তৈরির কথা ছিল। কুলপি ব্লক হাসপাতালের পিছনে এক ব্যক্তির দানের জমিতে কলেজ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে কমিটিও তৈরি হয়। কিন্তু পরে ওরা ক্ষমতায় আসে। এরপরে আর কোনও কাজ এগোয়নি।’’

বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদার বলেন, ‘‘কলেজের নথিভুক্তকরণ হয়ে গিয়েছে। হুগলি নদী লাগোয়া দুর্গানগর গ্রামের কাছে সেচ দফতরের ২০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। টাকা মঞ্জুর হয়নি দেখে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’’ তবে জনপ্রিয় হাইস্কুলে সকালে কলেজের পঠন পাঠন শুরু করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

college kilometers distance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE