Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

স্কুলের পড়ুয়াদের নতুন জামা কিনে দিল দাদারা

এই প্রস্তাবে রাজি হয় বাকিরাও। নবম শ্রেণির ছাত্রেরা যে যেমন পেরেছে আর্থিক সাহায্য করে ২৩০০ টাকা চাঁদা ওঠে। ওই সাত ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে কেনাকাটা করতে যায় তারা।

উপহার: স্কুলের ছেলেদের নতুন পোশাক দিচ্ছে দাদারা। নিজস্ব চিত্র

উপহার: স্কুলের ছেলেদের নতুন পোশাক দিচ্ছে দাদারা। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৪
Share: Save:

টিফিনের পয়সা জমিয়ে রেখেছিল আমিরুল গাজি, রাজউদ্দিন গাজিরা। সেই টাকায় চাঁদা তুলে নিচু ক্লাসের প্রসেনজিৎ ঘোষ, প্রীতম দালালদের জন্য পুজোয় নতুন পোশাক দিয়েছে তারা। তাদের এই দায়িত্ববোধের নমুনা দেখে আপ্লুত হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন ঘোষ।

বুধবার বিকেলে হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে নবম শ্রেণির আমিরুল গাজি, রাজউদ্দিন গাজি, প্রসূন সাহা, সন্দীপ কুণ্ডু, অনির্বাণ দাস-সহ কয়েকজন ছাত্র আসে। প্রধান শিক্ষককে জানায়, তারা পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যত পড়ুয়া আছে, খোঁজ করে দেখেছে খুবই দরিদ্র ৭ জনের পরিবার। তাদের এবার পুজোয় নতুন পোশাক হয়নি। আমিরুলেরা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই সাত ভাইয়ের মুখে পুজোর আগে হাসি ফোটাবে।

এই প্রস্তাবে রাজি হয় বাকিরাও। নবম শ্রেণির ছাত্রেরা যে যেমন পেরেছে আর্থিক সাহায্য করে ২৩০০ টাকা চাঁদা ওঠে। ওই সাত ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে কেনাকাটা করতে যায় তারা। সন্দীপ বলে, ‘‘আমরা ওই ভাইদের বলি, যার যা পছন্দ, সেই মতো টি-শার্ট বা জামা নিতে পারো। সকলে টি-শার্ট কিনেছে।’’

যে সব ছাত্রকে পোশাক দেওয়া হল, তাদের মধ্যে আছে পঞ্চম শ্রেণির প্রসেনজিৎ মণ্ডল। ঘোষপাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিতের বাবা নেই। মা বিড়ি শ্রমিক। এবার পুজোয় নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেনি মা। একই অবস্থা অষ্টম শ্রেণির পল্লব মান্নার। হিঙ্গলগঞ্জ পথের দাবি গ্রামের বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির প্রীতম দালাল বলে, ‘‘বাবা করোনার সময়ে মারা যান। মা ছোট্ট দোকান চালিয়ে আমাকে ও দাদাকে পড়ান। পুজোয় আমাদের কারও নতুন জামা হয়নি। দাদাদের থেকে পোশাক পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।’’

সপ্তম শ্রেণির মোস্তাকেন গাজিরও একই অবস্থা। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আকাশ গাজির বাবা-মা কেউ নেই। হিঙ্গলগঞ্জ কাটপোল গ্রামে দাদু-দিদার কাছে থাকে সে। আকাশের কথায়, ‘‘দাদু-দিদা নতুন পোশাক কিনে দিতে না পারায় মন খারাপ ছিল। স্কুলের দাদারা পোশাক কিনে দেবে ভাবিনি।’’ আমিরুলের কথায়, ‘‘আমাদের এক সহপাঠী একই পোশাক বার বার পরত। তা দেখে মনে হয়, ওকে পুজোয় সকলে মিলে একটা পোশাক দেব। তারপর মনে হল, আরও যদি কোনও ভাই থাকে স্কুলে, যাদের নতুন পোশাক হয়নি পুজোয়। খোঁজ শুরু করি। সাতজনের কথা জানতে পারি। আমরা খুশি, ওদের মুখে পুজোর আগে সামান্য হাসি ফোটাতে পেরে।’’

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘২৮ বছর শিক্ষকতা করছি। কখনও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। এই ছাত্রদের জন্য আমি গর্বিত।’’ হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিন বলেন, ‘‘স্কুল শুধু পড়াশোনা নয়, মানুষ হতেও শেখায়। এই ছাত্রেরা যা করল, তা বোঝায় ওরা মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 New Dress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE