Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Basirhat

শিক্ষক নেই, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিশুশিক্ষা কেন্দ্র

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের বাদুড়িয়া ব্লকে ২০০০ সাল নাগাদ প্রায় ৫০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) গড়ে ওঠে।

বন্ধ পড়ে রয়েছে বাদুড়িয়া নতুন চণ্ডীপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। চারপাশ ভরেছে আগাছায়। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ পড়ে রয়েছে বাদুড়িয়া নতুন চণ্ডীপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। চারপাশ ভরেছে আগাছায়। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৬
Share: Save:

শিক্ষকের সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে নেমে আসায় বন্ধ হয়ে গেল চারটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। কিছু শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আবার মাত্র এক জন শিক্ষকের ভরসায় চলছে।

বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া ব্লকের বেশিরভাগ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের এমনই হাল। এলাকার বহু ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, কিছু অভিভাবক দূরের স্কুলে ভর্তি করলেও অনেকে আবার বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে যোগ দিচ্ছে। বাড়ছে বাল্যবিবাহ।

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের বাদুড়িয়া ব্লকে ২০০০ সাল নাগাদ প্রায় ৫০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) গড়ে ওঠে। সেখানে প্রি-প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা পড়াশোনা করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কুল গড়ার জন্য জমি দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষ। জমিদাতার তরফে এক জন-সহ প্রতি স্কুলে ৪ জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তারপর আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

প্রথম দিকে স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ২,৭০০। অবসরের সঙ্গে কমতে থাকে শিক্ষকের সংখ্যা। কমে পড়ুয়ার সংখ্যাও। বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৮০০। শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে ৪টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে তালা পড়েছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে অবসর নেওয়ার ফলে আরও ৪টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র শিক্ষকশূন্য হয়ে যাবে। বর্তমানে ২৭টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন। সেগুলিও বন্ধের মুখে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ না হলে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাদুড়িয়ার নতুন চণ্ডীপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জঙ্গলে ঘিরে ফেলেছে স্কুলভবন। দিনের বেলায় স্কুল চত্বরে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়ায়। রাতে দুষ্কৃতীদের আড্ডা বসে বলে অভিযোগ।

ওই স্কুল গড়তে জমি দিয়েছিলেন আশুতোষ বৈদ্য। তাঁর স্ত্রী ওই স্কুলে পড়াতেন। পরে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এ দিকে, শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই স্কুলটি। বর্তমানে জমি ফেরত চান আশুতোষ। তিনি বলেন, ‘‘জমি দিয়েছিলাম শিশুদের পড়াশোনার জন্য। স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই। তাই জমি ফেরত চাইছি।’’ এলাকার বাকি জমিদাতাদেরও বক্তব্য, স্কুলই যখন উঠে গিয়েছে তখন জমি ফেরত দেওয়া হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক স্বপন মণ্ডল, বাহারুদ্দিন গাজিরা বলেন, ‘‘আগে বাড়ির কাছে স্কুল থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে যাতায়াতে সুবিধা হত। এখন এক-দেড় মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, গ্রামের স্কুল ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’’

(ডেজিগনেশনটা কি ঠিক?) ব্লক শিক্ষা আধিকারিক আয়ুব আলির দাবি, ইতিমধ্যে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির বহু পড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে ইটভাটা বা অন্যত্র কাজে যোগ দিয়েছে। কিছু পড়ুয়া অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা কমবেশি ৮৫০। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলগুলি অবিলম্বে চালু করা দরকার। না হলে শিক্ষার বড় রকম ক্ষতি হবে।’’

স্থানীয় বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে গ্রামের স্কুলগুলি যাতে দ্রুত চালু করা হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলব।’’

বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘‘শিক্ষক না থাকায় অনেক পড়ুয়া স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE