E-Paper

স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা মিলছে না অনেক হাসপাতালেই

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অনিয়ম রুখতে কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। গত এক বছরে বেশ কিছু হাসপাতাল অনিয়মের অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়েছে। জেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন আনন্দবাজারের প্রতিবেদক।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ঘটনা ১: বসিরহাটের মিনাখাঁ থানার জয়গ্রাম গ্রামের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের আলামিন মোল্লা মাসখানেক আগে বাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। পা ভাঙে। প্রথমে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পরে বাগুইআটি এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। ওই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা মিলবে বলে তাঁরা জানতেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে শোনেন, সেই সুবিধা মিলবে না। বাধ্য হয়ে ঘর থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পায়ের অপারেশন করে পাত বসানো হয়। কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় ফের ৯০ হাজার টাকা খরচ করে অপারেশন করতে হয়েছে। আলমিন বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আগে ব্যবহার করা যেত, এখানে আর হয় না। আমি একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করি। রোজগার সামান্যই। ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি। কার্ড থেকেও কোনও লাভ হল না।’’ যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, সঠিক গাইডলাইন মানা হয়নি বলেই কার্ডের সুবিধা দেওয়া যায়নি।

ঘটনা ২: হেমনগর থানার যোগেশগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ফণী বর্মণ জানান তাঁর দাদা দুলাল বর্মণের কিছু দিন আগে ব্রেন স্টোক হয়। বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুমার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কোনও সুবিধা মিলবে না। প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানো হয়। ফণী বলেন, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, আগে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা হত। এখন আর হবে না। আমরা দিনমজুরি করি। দরিদ্র পরিবার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় কোনও লাভ হল না।’’

এগুলি কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাননি— এমন অভিযোগ জেলা জুড়ে বহু মানুষের। কেন এই অবস্থা? রাজ্যের প্রায় ১৪২টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বেনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গত এক বছরে শাস্তির মুখে পড়েছে। সেই তথ্য সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টালে তোলা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে কখনও স্বাস্থ্য দফতর, কখনও স্বাস্থ্য কমিশন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগী ভর্তি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আবার কোনও হাসপাতালকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে বাদও দেওয়া হয়েছে।

বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিউল ইসলাম গায়েন বলেন, ‘‘এই স্বাস্থ্য জেলার কোনও প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেনিয়মের জন্য শাস্তির মুখে পড়েছে বলে জানা নেই। তবে কারও সমস্যা হলে জেলাশাসকের দফতরে বা স্বাস্থ্যভবনে জানাতে পারেন।’’ তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘যাঁরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন না, তাঁরা স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে সমস্যার সমাধান করা হবে।’’

বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। কেন্দ্রে আয়ুষ্মান কার্ড চালু করুক এ রাজ্য। তা হলেই মানুষ উপকৃত হবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Basirhat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy