যেতে নাহি দিব। ছবি: নির্মল বসু।
পড়ুয়াদের চোখের জলে আটকে পড়লেন মাস্টারমশাই।
ছাত্রছাত্রীদের কাঁদতে দেখে একটা সময়ে দু’চোখ জলে ভরে যায় স্যারেরও।
শনিবার এমন দৃশ্য দেখে ততক্ষণে হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলেরবিল এবিএস মদনমোহন বিদ্যাপীঠের সামনে অভিভাবকদের ভিড় জমে গিয়েছে। কেবল পড়ুয়ারাই নয়, অভিভাবকদেরও দাবি, তাঁদের প্রিয় সিদ্ধার্থ স্যারকে কিছুতেই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে দেওয়া হবে না।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সতেরো বছর আগে হিঙ্গলগঞ্জের ওই স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দেন বসিরহাটের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ মণ্ডল। সে সময়ে স্কুল বলতে ছিল টিনের আর একটি খড়ের চালের দু’টি ঘর। ছাত্রছাত্রী মেরেকেটে ২৩০-৪০ জন। ৮ জন শিক্ষক। কিন্তু বর্তমানে ওই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ৬শো ছাড়িয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী-সহ আছেন ২০জন। দোতলা স্কুলে ২টি হলঘর ছাড়াও তৈরি হয়েছে আরও ১৬টি ঘর। এই প্রকাণ্ড উন্নয়নের অন্যতম কান্ডারি হিসাবে সিদ্ধার্থবাবু সকলের নয়নের মণি। স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক— সকলেই মানেন সে কথা। সেই সিদ্ধার্থবাবু পারিবারিক কারণেই হিঙ্গলগঞ্জ ছেড়ে বসিরহাটের দণ্ডিরহাটের একটি স্কুলে চলে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। জানাজানি হতেই পড়ুয়ারা গোঁ ধরে।
শনিবার ক্লাস বন্ধ রেখে হাতে পোস্টার নিয়ে তাদের ভালবাসার মানুষটির জন্য স্কুল খোলার আগে থেকে অপেক্ষা করছিল তারা। স্যার আসা মাত্রই তাঁকে ঘিরে হট্টগোল শুরু করে সকলে। কেউ কেউ একটা সময়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। স্যারকে ওই স্কুলে রেখে দিতে মরিয়া সকলে। প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে গিয়েও অবস্থানে বসে তারা।
প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘সিদ্ধার্থবাবুর স্ত্রী অসুস্থ বলে বাড়ির কাছে স্কুলে চলে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। আমাদের পক্ষে ওঁকে অনেক বোঝানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সভা ডেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।’’ স্কুলের শিক্ষিকা লীনা দাস বলেন, ‘‘সিদ্ধার্থবাবুর মত মানুষ বিরল। তাঁর চেষ্টায় যেমন স্কুলের এমন উন্নয়ন হয়েছে। উনি চলে গেলে স্কুলের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ পল্লব বৈদ্য, অপর্ণা মণ্ডল, দেবকুমার বর্মন, প্রীতি প্রসাদ গায়েনরা সকলে জানায়, স্যার যতটা যত্ন নিয়ে পড়ান, তা অতুলনীয়। স্যার কি শুধুই ব্যক্তিগত কারণে স্কুল ছাড়তে চাইছেন, সে প্রশ্নও তোলেন অভিভাবকদের কেউ কেউ।
সিদ্ধার্থবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুল ছাড়তে মন চাইছে না। আমাকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের যে ভালবাসা দেখলাম, তাতে আমি অভিভূত। এরপরে স্কুল ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy