বেহাল: হিঙ্গলগঞ্জের স্কুলের পরিস্থিতি। নিজস্ব চিত্র
বয়সের ভারে এমনিতেই জরা ধরেছিল, তার উপরে আবার আইলার ঘা। ২০০৯ সালের সেই ঝড়ের তাণ্ডব সইতে পারেনি ‘বুড়ো’ স্কুলবাড়িটি। তার পর থেকে সুন্দরবনের অন্যতম পুরনো স্কুলটির অবস্থা আর বদলায়নি। ফলে হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে এখন প্রাণ হাতে ক্লাস করতে হয় পড়ুয়াদের।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এত পুরনো স্কুল এলাকায় খুব কম রয়েছে। ঝড়ে তো কত কিছুর ক্ষতি হয়েছে। তার অনেক কিছুই নতুন করে গড়া হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই স্কুল বাড়িটির দশা এমন হল কেন? কেন প্রশাসন বাড়িটি মেরামতে উদ্যোগী হয়নি?’’ এমন অবস্থার খেসারত অবশ্য দিতে হচ্ছে শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলটিকে। পড়ুয়াদের অনেকেই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পড়ুয়াদের প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকতে থাকতে হয়— এই বুঝি মাথায় খসে পড়ল চাঙড়।
স্কুলটি তৈরি হয়েছিল ১৯২৩ সালে। সেই সময় এলাকায় অন্য স্কুল বিশেষ ছিল না। নানা কারণে স্কুলটির সুনামও ছড়িয়েছিল আশপাশের এলাকায়। ফলে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। পুরনো হলেও স্কুল বাড়িটির তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
তাল কাটে ২০০৯ সালে আয়লায়। একে ঝড়ের তাণ্ডব, তার উপরে বন্যা পরিস্থিতি। পুরো স্কুলবাড়িটিই ডুবে গিয়েছিল সে বছর। দীর্ঘদিন জল জমে ছিল স্কুলে। জল সরতেই ধীরে ধীরে শুরু হয় বিপর্যয়। দেওয়ালের পলেস্তারা খসতে শুরু করে। কোনও ঘরের ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়ে। স্কুলের পড়ুয়ারা জানাল, সেই যে শুরু হল তা এখনও চলছে।
সম্প্রতি বুলবুল ঝড়ের পরে স্কুলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। স্কুলের মোট ২৫ টি ক্লাসঘরের মধ্যে ১৫ টি ঘর ব্যবহারের যোগ্য নয়। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘সেই ঘরগুলি ব্যবহার না করে আমাদের কোনও উপায়ও নেই। আর কোনও বিকল্প না থাকায় এক রকম বাধ্য হয়েই আমরা ওই ঘরগুলি ব্যবহার করছি।’’
এমনই একটি ঘরে গিয়ে দেখা গেল দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চলছে। ছাদের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল ধরেছে। কয়েকটি জায়গায় চাঙড় খসে পড়ে লোহার রড বেরিয়ে এসেছে। ঘরের ভিতরের দেওয়ালের প্লাস্টার নেই বললেই চলে। এমন হাল একাধিক শ্রেণিকক্ষের।
ওই স্কুলের পড়ুয়া অসিত মণ্ডল, পূজা মণ্ডল, দীপ্তি মণ্ডল, সুদীপ্ত পাত্রেরা বলে, ‘‘ভালো পড়াশোনা হয় বলে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছি ঘর গুলোর অবস্থা ভয়ঙ্কর। বৃষ্টি হলে জল ছাদ থেকে জল পড়ে। ক্লাস চলাকালীন একাধিক ঘরে চাঙড় ভেঙে পড়েছে। তাতে একবার এক শিক্ষক জখমও হয়েছিলেন। আমরা ভয়ে ভয়েই ক্লাস করি।’’
স্কুলের পাঁচটি ঘর ও সংলগ্ন বারান্দা যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তাই ওই অংশে পড়ুয়াদের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ছাত্রীদের শৌচাগার কার্যত ধ্বংসস্তূপ। স্কুলের ছাত্রী বনানী হালদার, সুমি গায়েন, আজমিরা বরকন্দাজেরা বলে, ‘‘শৌচাগারে জলের ব্যবস্থা তো নেই। এমন অপরিচ্ছন্ন যে, ব্যবহার করা যায় না।’’ স্কুলের স্টাফ রুমটির দশা এমন যে, সেটি বন্ধ করে দিয়ে একটি ক্লাসরুমকে শিক্ষকদের বসার ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একে স্কুলের ভগ্ন দশা, তার উপরে শিক্ষও ও শিক্ষাকর্মীর অভাব। সব মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা মুখ ফেরাচ্ছে এই স্কুল থেকে। আগে এক হাজারেরও বেশি পড়ুয়া ছিল। বর্তমানে তা ৮০০-তে নেমে এসেছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক গোপাল চন্দ্র পাত্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ এখনও হয়নি। সরকার নজর না দিলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলটিকে সচল রাখা কঠিন।’’
বসিরহাটের সহকারি স্কুল পরিদর্শক শান্তা দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব’’ স্কুলের পরিস্থিতির কথা জানেন এলাকার বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ওই স্কুলের পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্লাসঘর নতুন করে তৈরির ব্যবস্থাও হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy