Advertisement
E-Paper

আবাসনের ছাদের অবৈধ ফ্ল্যাটে বাস শাসকদলের নেত্রীর, প্রশ্নে খড়দহ পুরসভা

বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের অজানতেই ওই ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নেত্রীকে। যে কারণে আবাসনের বাসিন্দারা তাঁদের ইচ্ছে মতো ছাদ ব্যবহার করতে পারছেন না।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৮:০৪
খড়দহ পুরসভা।

খড়দহ পুরসভা। ছবি: সংগৃহীত।

নকশায় নেই। অথচ ছাদের উপরে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে একটি ফ্ল্যাট! সেখানে আবার বসবাস করেন শাসকদল তৃণমূলের এক নেত্রী। কিন্তু কী ভাবে? ভাড়াটে হিসেবে, নাকি ফ্ল্যাটের মালিক হিসাবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন ওই আবাসনের প্রোমোটার।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের অজানতেই ওই ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নেত্রীকে। যে কারণে আবাসনের বাসিন্দারা তাঁদের ইচ্ছে মতো ছাদ ব্যবহার করতে পারছেন না। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ খড়দহের রিজেন্ট পার্ক এলাকার ওই আবাসনের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, খড়দহ থানা এবং খড়দহ পুরসভাকে বিষয়টি একাধিক বার জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।

অবশ্য প্রোমোটারের দাবি, তিনি বাসিন্দাদের জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই নির্মাণ ভেঙে দেবেন। তাঁর দাবি, রিভাইসড প্ল্যানে না দেখিয়েও ওই ধরনের নির্মাণ করা যেতেই পারে। যদিও খড়দহ পুরসভা জানাচ্ছে, প্রোমোটারকে ওই নির্মাণ ভাঙতে বলা হয়েছে।

খড়দহের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় রয়েছে ওই পাঁচতলা (জি+৪) আবাসনটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফ্ল্যাটের একতলায় বাণিজ্যিক কাজের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা বদলে সেখানেও ফ্ল্যাট করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ছাদের উপরে নকশার বাইরে গিয়ে একটি ঘরের ফ্ল্যাট তৈরি করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সেই ফ্ল্যাটেই তৃণমূলের এক নেত্রী রয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁকে ওই ঘরটি ভাড়ায় দিয়েছেন প্রোমোটার গৌতম ঠাকুর। বাসিন্দাদের তরফে আবাসনের সম্পাদক সলিল দাস জানান, ২০২১ সাল থেকে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। ২০২২ সালে তাঁদের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়। ফ্ল্যাটের উপরে ওই ঘরটি তখন থেকেই ছিল বলে জানান বাসিন্দারা।

সলিলের কথায়, ‘‘শুরুতে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আর ফ্ল্যাটে লোকজন বরাবরই কম। অধিকাংশই তালাবন্ধ। ফলে জোট বেঁধে জোরালো বিরোধিতা করতে পারনি। কয়েক বার খড়দহ পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। শেষ বারে তারা নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রোমোটারকে বললেও কোনও লিখিত নির্দেশ দেয়নি। উল্টে পুরসভা আমাদেরই বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশও কোনও সাহায্য করেনি।’’

উল্লেখ্য, গার্ডেনরিচে বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর পুর আইন সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা তৈরি করে বিভিন্ন কর্পোরেশন ও পুরসভাকে পাঠাচ্ছে। যাতে যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রেই পুর আইন লঙ্ঘিত হতে না পারে। যদিও খড়দহ রিজেন্ট পার্ক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কাশীনাথ পাঠক বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের সমস্যা যতটা পারি সমাধানের চেষ্টা করি। ওই আবাসনের বাসিন্দারা ওঁদের সমস্যার কথা আমাদের জানান। ওঁরা যে নকশা দেখিয়েছেন, তাতে গ্যারাজ-সহ চারতলার অনুমতি রয়েছে। উপরে ওই ঘরটি থাকার কথা নয়। আমরা যতটা খবর পেয়েছি, পুরসভা ওই নির্মাণ ভাঙার কথা বললেও কোনও লিখিত নির্দেশ দেয়নি। প্রোমোটার ঘরটি ভেঙে দেবেন বললেও লিখিত ভাবে কিছু দেননি বলেই আবাসিকেরা জানিয়েছেন।’’

প্রোমোটার গৌতম ঠাকুরের অবশ্য দাবি, রিভাইসড প্ল্যানে না দেখালেও ওই ধরনের ঘর রাখা যায়। তাঁর যুক্তি, ‘‘আমি ভেবেছিলাম আবাসিকেরা ঘরটি নিয়ে নেবেন। ওঁরা কমিউনিটি হল করবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু ওঁরা যখন নিলেন না, তখন ডিসেম্বরে ঘরটি ভেঙেই দেব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ওই ঘরে যাঁরা আছেন, তাঁদের আমি ঘর ভাড়া দিইনি।’’ তা হলে তাঁরা কী হিসেবে থাকছেন ওখানে? সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন গৌতম।

অন্য দিকে, খড়দহ পুরসভার চেয়ারপার্সন নীলু সরকার বলেন, ‘‘ওই নির্মাণটি থাকার কথাই নয়। আমরা প্রোমোটারকে বলেছি নির্মাণটি ভেঙে দিতে হবে। উনি কিছু দিন সময় চেয়েছেন। উনি না ভাঙলে পুরসভাই ভেঙে দেবে।’’

Flat TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy