Advertisement
১১ মে ২০২৪
পুরভোট ২০১৫: কামারহাটি পুরসভা

সরলেন বাকিরা, লড়াইয়ে শুধু তৃণমূল ও সিপিএম

লড়াইটা শুরু হয়েছিল চার জনের মধ্যে। কিন্তু তুঙ্গে ওঠার আগেই ভঙ্গ দিয়েছেন দু’জন। ফলে কামারহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মুখোমুখি লড়াইয়ে তৃণমূল ও সিপিএম। কামারহাটির ৩৫টি আসনের মধ্যে শুধু ১১ নম্বর ওয়ার্ডেই তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। যদিও প্রথমে কংগ্রেস এবং বিজেপিও এই ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা পদ প্রত্যাহার করে নেন।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২২
Share: Save:

লড়াইটা শুরু হয়েছিল চার জনের মধ্যে। কিন্তু তুঙ্গে ওঠার আগেই ভঙ্গ দিয়েছেন দু’জন। ফলে কামারহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মুখোমুখি লড়াইয়ে তৃণমূল ও সিপিএম।
কামারহাটির ৩৫টি আসনের মধ্যে শুধু ১১ নম্বর ওয়ার্ডেই তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। যদিও প্রথমে কংগ্রেস এবং বিজেপিও এই ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা পদ প্রত্যাহার করে নেন।

কামারহাটি পুরসভা লাগোয়া নওদা পাড়া, রামকৃষ্ণপল্লি, শ্রীকৃষ্ণপল্লি, ৬ নম্বর বাগান, শিবপদ পাল পল্লি, বঙ্কিম পল্লি, মজদুর কোয়ার্টার্স, সরকারি আবাসন নিয়ে ১১ নম্বর ওয়ার্ড। ভোটার সংখ্যা আট হাজার ৮০০। ৪০ বছর ধরে বামেদের দখলে রয়েছে এই ওয়ার্ড। এখান থেকেই চার বার ভোটে জিতে পুরপ্রধান হয়েছেন সিপিএমের গোবিন্দ গঙ্গোপাধ্যায়। শেষ তিনটি পুরভোটে জিতেছেন সিপিএমের শ্যামল রায়। ২০১০-এ সিপিএমের কাছে ৫২৭ ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূল।
এ বারে ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে সিপিএমের নতুন মুখ মধুজা ঘোষাল। তিনি আদপে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও পুরনো সিপিএম কর্মী। তৃণমূলে অবশ্য কোনও হেভিওয়েট নন, স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্র ঘনিষ্ঠ, সিরিয়ালের অভিনেত্রী দেবপর্ণা চক্রবর্তীকে প্রার্থী করেছে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা।
ওই ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন গৌরী চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি’র হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাখি কোলে সরকার। কিন্তু দু’জনেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। রাখিদেবী বলেন, ‘‘এলাকার জন্য কাজ করার ইচ্ছা ছিল। তাই বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে কিছু ঘটনায় মনে হয়েছে জয়ী হলেও হয়তো দলের সে ভাবে সহযোগিতা পাবো না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের বিরোধিতা না করে সরে দাঁড়ালাম। কেউ চাপ দেননি।’’ অন্য দিকে, ভয় দেখানোর কথা অস্বীকার করেছেন গৌরীদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস ঘরানাতেই বড় হয়েছি। আর লড়াইটা তো সিপিএমের সঙ্গে। তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তৃণমূলের ভোট কাটতে চাইনি।’’

তবে উত্তর শহরতলির বিজেপির জেলা সভাপতি গোপাল সরকারের অভিযোগ, ‘‘মদন মিত্রের নির্দেশেই সব কিছু হচ্ছে। ওঁদের ভয়েই আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’’ আবার কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগণার জেলা সভাপতি তাপস মজুমদার বলছেন, ‘‘ভয়ে দেখিয়ে গৌরীদেবীর প্রার্থী পদ তোলানো হয়েছে।’’ কিন্তু উনি তো এ কথা স্বীকার করছেন না? এ বার তাপসবাবুর দাবি, ‘‘ভয়ে উনি কিছু বলছেন না।’’ যদিও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের কথায়, ‘‘বিজেপি ও কংগ্রেসের এই ঘর ভাঙানোর খেলাতেও বাজি মাত করেছেন মদন মিত্রই।’’

কোনও রাজনৈতিক তরজায় যেতে রাজি নন দেবপর্ণা। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তাই এলাকার মেয়ে হয়ে চটজলদি মানুষের সমস্যা বুঝে সমাধান করতে সুবিধা হবে। এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। মানুষও এটাই চান। তাই কোনও দিন রাজনীতি করেছি কি করিনি সেটা কোনও বিষয়ই নয়। তাই আমিই জয়ী হব।’’ তিনি জানান, তাঁর বাবা মেঘনাথ চক্রবর্তী ও মা নিবেদিতা চক্রবর্তী দু’জনেই তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। শ্যুটিংয়ের ব্যস্ত সিডিউল সামলে প্রচারে নেমে দেবপর্ণা বাসিন্দাদের আশ্বাস দিচ্ছেন এলাকার রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জলের সমস্যা দূর করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।

দেবপর্ণার এই কথায় অবশ্য আমল দিতে রাজি নন মধুজা। তিনি বলেন, ‘‘দেবপর্ণা ছোট মেয়ে। তাই ওঁর প্রতি একটা আলাদা সহানুভূতি রয়েছে। ওঁকে বলেছি আগে মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। তাঁদের কথা বুঝতে হবে। তারপর রাজনীতি। ওই ওয়ার্ডের মানুষ এখনও সিপিএমকেই চায়। আর বিজেপি এবং কংগ্রেস থাকলো কি না থাকলো সেটা কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ মধুজার দাবি, সিপিএমের শ্যামল রায় দীর্ঘ দিন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন,
তাই মানুষ এ বারেও সিপিএমকেই জয়ী করবে।

নিজেকে ‘ছোট’ বলে মানতে নারাজ দেবপর্ণা। বলছেন, ‘‘২৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়। তাহলে ২৩ বছর বয়স মোটেই কম নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE