সুন্দরবনে মধু ভাঙতে গিয়ে ফের বাংলাদেশি জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হলেন তিন গ্রামবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিনজনের নাম রমেশ মণ্ডল, স্মরজিৎ জোয়ারদার এবং সন্তোষ মণ্ডল। বাড়ি বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন লাগোয়া কালীতলা এবং যোগেশগঞ্জ এলাকাতে। মুক্তিপণ বাবদ দুষ্কৃতীরা সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করেছে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার রাতে এই খবর পেয়ে পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষীরা তল্লাশি শুরু করেছে। তবে সোমবার পর্যন্ত দুষ্কৃতী এবং নিখোঁজ গ্রামবাসীদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ এপ্রিল হিঙ্গলগঞ্জের সামসেরনগর, কালীতলা এবং যোগেশগঞ্জ এলাকা থেকে তিনটি নৌকায় করে ২১ জন জঙ্গলে গিয়েছিল মাছ ধরতে এবং মধু ভাঙতে গিয়েছিলেন। ১০-১২ দিনের এই অভিযানে নৌকায় পর্যাপ্ত খাওয়ার, জ্বালানি এবং মধু রাখার পাত্র ছিল। গত ১৭ এপ্রিল সকালে চামটা দ্বীপে সুরসুনা জঙ্গলে গাড়লে (খাড়ির মুখে) যখন তাঁরা মৌচাক ভাঙার জন্য বুলান (লাঠির মাথায় মশাল জ্বালানোর সরঞ্জাম।) তৈরিতে ব্যস্ত, সে সময়ে একটি নৌকায় করে ৮-১০ জনের জলদস্যু-দল বন্দুক হাতে হাজির হয়। সেখানে থাকা একটি নৌকায় লুঠপাট চালিয়ে তারা যোগেশগঞ্জের বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল, কালীতলার বাসিন্দা স্মরজিৎ জোয়ারদার এবং সামসেরনগরের সন্তোষ মণ্ডলকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা পণবন্দিদের বুড়িরডাবরি, তেঁতুলবেড়িয়া হোগলডগরা জঙ্গলের দিকে নিয়ে গিয়েছে।
হেমনগর উপকূলবর্তী থানার পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীদের অপহরণের পরে দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যায়। এরপরে তারা মোবাইলে প্রথমে তিন জনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৭ লক্ষ টাকা দাবি করে। এই খবর পেয়ে বসিরহাটের এসডিপিও এবং হাসনাবাদের সিআই হেমনগরে যান। অপহৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সীমান্তরক্ষীদের খবর দেওয়া হয়। দুষ্কৃতী ধরতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিবিজিকেও জানানো হয়েছে।
কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রথমে ৭ লক্ষ টাকা চায় দুষ্কৃতীরা। পরে একাধিকবার কথা বলে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা চায়। টাকা না দিলে ফল ভাল হবে না বলে হুমকি দিয়েছে। মুক্তিপণের টাকা দস্যুরা তাদের ঠিক করা জঙ্গলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। গরিব মৌলেরা মধু ভেঙে, মাছ ধরে সামান্য যেটুকু অর্থ উপার্জন করে তাতে সংসার চলে না। তার উপর মুক্তিপণের এত টাকা ওরা পাবে কোথায়।’’
এই ঘটনার পরে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জলদস্যুরা যে ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাতে জল এবং জঙ্গল যাঁদের একমাত্র জীবিকার স্থান সেই সব মানুষ নিরাপত্তার অভাবে নদী পথে সুন্দরবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে তিন মৎসজীবীকে অপহরণের পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া হয়েছিল তাঁদের। পরে ধরা পড়ে কয়েক জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy