মরণফাঁদ বনগাঁ-চাকদহ সড়কে ফের মৃত্যু।
ওই রাস্তার দু’ধারে দীর্ঘদিন ধরেই ইট-বালি-স্টোনচিপসের মতো ইমারতী সামগ্রী জড়ো করে রাখে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। রয়েছে ট্রাকের বেআইনি পার্কিংও। এই দুই কারণে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় গত তিন মাসে দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসনের। রবিবার সেই মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হল আরও তিন জনের নাম।
এ দিন বনগাঁ শহরের চাঁপাবেড়িয়া এলাকায় ওই সড়কে বেপরোয়া ভাবে ছুটে আসা একটি পাথর বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় নিশিকান্ত সরকার (৪৮) নামে এক মোটরবাইক চালক এবং তাঁর সঙ্গী মহিলার। নিশিকান্তবাবুর বাড়ি নদিয়ার হাঁসখালি থানার পায়রাডাঙা এলাকায়। তিনি গাইঘাটায় আত্মীয় বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। রাত পর্যন্ত মৃত মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। এ দিনই গোপালনগরের বর্ধন বাজারে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় মলয় মাঝি (৩৫) নামে এক যুবকের।
দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয়েরা ওই সড়কের দু’ধার থেকে ইমারতি সামগ্রী সরানো এবং বেআইনি পার্কিং বন্ধের দাবিতে দেহ দু’টি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই ডাঁই করা ছিল ইমারতি সামগ্রী। বিক্ষোভকারীদের একাংশের ওই অভিযোগ, ইমারতি সামগ্রীর জন্যই বাইক-চালক সরে যাওয়ার জায়গা পাননি। বিক্ষোভের জেরে পুলিশ প্রথমে দেহ তুলতে বাধা পায়। পরে বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর দাবি মেটানোর আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সমস্যা মেটাতে পুলিশ এলাকার মানুষদের নিয়ে বৈঠকও ডাকে। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালককে ধরতে পারেনি পুলিশ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সড়কের পাশে ইমারতী সামগ্রী ফেলে রাখার বিরুদ্ধে জেলা জুড়ে কড়া পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। মালপত্র আটক করা হচ্ছে। গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন। বনগাঁ-চাকদহ সড়কের ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ শুরু হচ্ছে।’’
বছর সাতেক আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় ওই সড়ক সম্প্রসারণ হয়। বনগাঁ থেকে গোপালনগরের কদমতলা পর্যন্ত ওই সড়কের প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশ উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পড়ে। বাকিটা নদিয়ায়। দুই জেলার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, ওই রাস্তা ধরেই পেট্রাপোল বন্দরে যায় পণ্যবাহী ট্রাক। স্থানীয়দের অনেকেরই অভিযোগ, সম্প্রসারণের কিছুদিন পর থেকেই রাস্তাটির দু’ধার ট্রাকের বেআইনি পার্কিং জোনে পরিণত হয়। কিছু মানুষ ইমারতী সামগ্রী ফেলে ব্যবসা শুরু করেন। বহু বিক্ষোভ-অবরোধেও সমস্যা মেটেনি। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি নিজেও ভুক্তভোগী। বিধায়ক বলেন, ‘‘পুলিশকে বহুবার বলেছি। মাঝেমধ্যে পুলিশ ধড়পাকড় করে। কিন্তু লাগাতার অভিযান না চালানো হলে সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না।’’
এ দিন দুর্ঘটনার পরে ওই সড়কের বনগাঁ শহর থেকে গোপালনগর বাজার পর্যন্ত আট কিলোমিটার অংশে দেখা গেল, অন্তত ২০টি জায়গায় ইমারতী সামগ্রী ফেলা রয়েছে। পাশ দিয়ে প্রবল গতিতে ছুটছে যানবাহন। কোথাও কোথাও চোখে পড়ল গাছের গুঁড়িও সড়কের পাশে পড়ে রয়েছে। এমনকী, সড়কে শুকোতে দেওয়া হয়েছে ধানও। কোথাও পুলিশের নজরদারি নেই।