Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শিক্ষক মাত্র ২, সমস্যায় পড়ুয়া

স্কুলে শিক্ষক মাত্র দু’জন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৮। তা নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে চলছে পঠন-পাঠন। এ বার নতুন নিয়োগে শিক্ষক বাড়বে বলে আশা করছিল পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। কিন্তু কোনও বদল হল না। হতাশ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুলবাড়ি: স্কুলের মধ্যে খেলায় ব্যস্ত শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলবাড়ি: স্কুলের মধ্যে খেলায় ব্যস্ত শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

স্কুলে শিক্ষক মাত্র দু’জন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৮। তা নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে চলছে পঠন-পাঠন। এ বার নতুন নিয়োগে শিক্ষক বাড়বে বলে আশা করছিল পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। কিন্তু কোনও বদল হল না। হতাশ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

মন্দিরবাজারের উত্তর সুতোগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এ ঘর ও ঘরে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লাস নিয়ে কোনও রকমে সামাল দিচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে ক্লাস নেওয়া অসম্ভব। তেমনি পড়ুয়ারাদেরও সমস্যা হচ্ছে। এই অবস্থা শুধু ওই স্কুলের নয়, বেশ কিছু স্কুলেরই এমন দশা।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরবাজারে ৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে কাঁদিপুকুর প্রাথমিক, পাঁচনন প্রাথমিক, খোর্দমহাদেবপুর প্রাথমিক, খোর্দসদাশিবপুর প্রাথমিক, উত্তর সুতোবেচা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র দু’জন করে শিক্ষক রয়েছেন। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় কিছু স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। ফলে সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা। কারণ তাদের ঠিক ভাবে পড়াতে পারছেন না শিক্ষকেরা।

এ বিষয়ে মন্দিরবাজার চক্রের পরিদর্শক নবীন মালাকার বলেন, ‘‘কোন স্কুলে কতজন শিক্ষক জেলা থেকে পাঠিয়েছে, সেই তালিকা আমাকে জানানো হয়নি। তালিকা হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। কোনও স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা থাকলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকার আচনা পঞ্চায়েতে উত্তর সুতোগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, দোতলা ভবন। নীচের কাঁচা দেওয়াল। প্লাস্টার করা হয়নি আর্থিক অনুমোদনের অভাবে। দুটো ঘরের দেওয়ালে ব্ল্যাক বোর্ড। সেখানেই কোনও রকমে চলছে পড়াশোনা। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা পৌঁছয়নি এখনও। স্কুলের অফিস ঘরে চলছে প্রথম শ্রেণি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রথম শ্রেণিতে পড়াতে পড়াতেই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের লিখতে দিচ্ছেন। একই ভাবে পাশের ঘরে ক্লাস নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষক জগন্নাথ নস্কর। দেখা গেল, কচিকাঁচারা লেখাপড়ার থেকে নিজেদের মধ্যে দুষ্টুমিতে বেশি ব্যস্ত। শিক্ষকেরও তো সম্ভব নয় এ ভাবে দু’টি ক্লাস এক সঙ্গে চালানো।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিবপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘এ ভাবে দু’জনে পাঁচটা ক্লাস নেওয়া প্রায় অসম্ভব। পড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলাতে হয়। ভোটের সময়ে ডিউটি পড়ে। শিক্ষা সভাতেও যোগ দিতে হয়।’’ তিনি জানান, স্কুল থেকে আরও দু’জন শিক্ষকের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

একই বক্তব্য ধনুরহাট পঞ্চায়েতের পাঁচনন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ মণ্ডলের। তাঁর স্কুলে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। তিনি ও সহকারী এক শিক্ষিকা বছর কয়েক ধরেই পঠন পাঠন সামলাচ্ছেন। তিনি জানান, দোতলা ভবনে উপর নীচে ওঠা নামা করে ক্লাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই।

নতুন শিক্ষকের আশাতে আছেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teachers Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE