Advertisement
E-Paper

অটো চালকদের ঋণ দেওয়া নিয়ে জটিলতা

ঋণের টাকা চেয়ে অটো চালকদের আন্দোলনের জেরে ‘নিরাপত্তার অভাব বোধ’ করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের বাসন্তী শাখা অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার থেকে ক্যানিং মহকুমার বাসন্তীতে ওই ব্যাঙ্কের শাখা অফিস বন্ধ রাখার নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাহকদের ওই ব্যাঙ্কের ক্যানিং শাখা থেকে লেনদেন করার অনুরোধ করা হয়েছে।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৮

ঋণের টাকা চেয়ে অটো চালকদের আন্দোলনের জেরে ‘নিরাপত্তার অভাব বোধ’ করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের বাসন্তী শাখা অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার থেকে ক্যানিং মহকুমার বাসন্তীতে ওই ব্যাঙ্কের শাখা অফিস বন্ধ রাখার নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাহকদের ওই ব্যাঙ্কের ক্যানিং শাখা থেকে লেনদেন করার অনুরোধ করা হয়েছে। এর ফলে যেমন সমস্যায় পড়েছেন স্টেট ব্যাঙ্কের ওই শাখার গ্রাহকেরা, তেমনই বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সরকারি নানা প্রকল্পের টাকা আটকে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা-প্রাপকেরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক এলাকার বিভিন্ন রুটের অবৈধ অটো বাতিল করে পরিবেশ-বান্ধব গ্যাসচালিত গ্রিন অটো চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো ব্লক প্রশাসন সমস্ত বেআইনি অটো বাতিল করতে ২০১২ সালে ক্যাম্প করে অটোগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ করে। অটো চালকদের প্রায় ৬ হাজার টাকা দিয়ে পুরনো অটো তুলে নেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে যাঁরা গ্রিন অটো কিনতে পারবেন না, তাঁদের বিএসকেপি লোনের মাধ্যমে ওই গ্রিন অটো দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সেই মতো অটোচালকেরা লোন চেয়ে ব্লক অফিসে আবেদন করেন।

অভিযোগ, ব্লক থেকে সমস্ত আবেদনপত্র ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হলে ব্যাঙ্ক ওই লোন দিতে আপত্তি করে। এরপর থেকে অটোচালকেরা পর্যায়ক্রমে কয়েক মাস ধরে ব্যাঙ্কের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। তারপরেই স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ শুক্রবার থেকে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে ব্যাঙ্কের ওই শাখা বন্ধ করে দেন।

বাসন্তী অটো ইউনিয়নের সভাপতি কার্তিক দাস বলেন, “পুরনো অটো বাতিল করে নতুন অটো চালু করার কথা বলা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে। যাদের নগদে নতুন অর্থ কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের বিএসকেপি লোনের মাধ্যমে নতুন অটো দেওয়ার কথা। ব্লক এলাকার প্রায় ৪০০ অটোচালক গ্রিন অটো কেনার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সেই লোন না দেওয়ায় আমাদের মতো গরিব অটোচালকেরা পুরনো অটো বাতিল করে দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন।” তাঁর মতে, এখন লোন না পেলে নতুন অটো কিনতে পারবেন না অনেকে। ফলে না খেতে পেয়ে মরার মতো অবস্থা হবে। কার্তিকবাবুর কথায়, “ব্যাঙ্কের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও কোনও কাজ না হওয়ায় আমাদের আন্দোলনের রাস্তায় যেতে হল।”

বাসন্তীর বিডিও কওসার আলি বলেন, “অবৈধ অটো বাতিল করে গ্রিন অটো চালু করার জন্য প্রশাসনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন অটো কোম্পানি, জেলা আরটিও-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পুরনো অটো বাতিল করা হয়েছিল। ব্যাঙ্ক লোন দিতে না চাওয়ায় অটো চালকেরা আন্দোলন করছেন বলে শুনেছি। ঠিক কী কারণে ব্যাঙ্কের শাখা অফিস বন্ধ করে দেওয়া হল তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

বাসন্তী পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রীদাম মণ্ডল বলেন, “হঠাত্‌ করে ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়েছি। পঞ্চায়েত এলাকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘরের টাকা বেনিফিসিয়ারিদের দিতে পারছি না। এ নিয়ে যে কোনও দিন পঞ্চায়েত অফিসে ঝামেলা হতে পারে।” বাসন্তীর এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রভুদান হালদার বলেন, “মাসের শেষ হঠাত্‌ করে ব্যাঙ্কের শাখা অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকা তুলতে পারছি না। কী করব বুঝতে পারছি না।”

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সন্তোষ সাউ বলেন, “ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি লোন অনুমোদন না করেন, তা হলে আমরা কী করতে পারি। অটো চালকেরা লোন চেয়ে মাঝে মধ্যে ব্যাঙ্কের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই ব্যাঙ্কের শাখা অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিই।”

স্টেট ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ম্যানেজার এমকে পীযূষ বলেন, “অটো চালকেরা লোনের জন্য যে আবেদন করেছেন, আমাদের মতে তা ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হবে না। সেই কারণে লোন দেওয়া হচ্ছে না। আর ওঁরা যে ভাবে আন্দোলন করছেন, তাতে কর্মীরা ওই শাখায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। সে জন্যই ব্যাঙ্কের ওই শাখা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

অটো চালকদের বক্তব্য, যদি ফর্ম ফিলাপের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তা সমাধানের জন্য উপায় বাতলে দিক ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তা না করে ব্যাঙ্ক বন্ধ করে কোনও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। উল্টে অসুবিধায় পড়ছেন বহু মানুষ। জটিলতার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন বাসন্তীর বিধায়ক তথা প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর। অবিলম্বে ব্যাঙ্ক খোলার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

samsul huda basanti southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy