অ্যাসিড বৃষ্টিতে ঝলসে গিয়েছে পাতা। সোমবার বাদুড়িয়ার ফতুল্যপুর গ্রামে গেলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানীরা। নমুনাও সংগ্রহ করলেন তাঁরা। ছবি: নির্মল বসু।
গাছের কাঁচা পাতার টুপটাপ ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি সোমবারেও।
কয়েকশো গাছ থেকে অনর্গল পাতা ঝরতে দেখে এ দিন বাদুড়িয়ার ফতুল্যপুর গ্রামে গিয়ে চমকে গেলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানীরাও। প্রত্যেকেই জানালেন, এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাঁরা এই প্রথম হলেন। রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রাম জুড়ে ঝরা পাতার আস্তরণ দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারাও। শুধু কি তাই! গাছ ঝলসে গিয়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা এবং কাশিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে গ্রামের শিশুরা। পুকুরের মাছও মরেছে।
শনিবার ইটভাটার ধোঁয়া বা অন্য কিছু থেকে বাতাসের সঙ্গে সালফার-ডাই-অক্সাইড মিশে বৃষ্টির জলের স্পর্শে এসে তা সালফিউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয় এবং পরে অ্যাসিড-বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ায় ওই ঘটনা বলে শিবপুরের বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন অধিকর্তা হিমাদ্রিশেখর দেবনাথের অনুমান ছিল।
সোমবার প্রবীর বারুইয়ের নেতৃত্বে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চার সদস্যের বিজ্ঞানীদের দলটি সেই ঘটনাই সরেজমিনে দেখতে যান। তাঁরা গোটা গ্রাম ঘোরেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। সংগ্রহ করেন গ্রামের জল, মাটি এবং পাতার নমুনা। শুকিয়ে যাওয়া গাছ, ফসলের ছবি তোলেন। একটি ইটভাটায় গিয়ে ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসতেই কাশতে থাকেন তাঁরা। এক বিজ্ঞানী ওই গন্ধকে সালফার-ডাই-অক্সাইডের গন্ধ বলে চিনতে পারেন। প্রবীরবাবু বলেন, “এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। আমরা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করা হবে। তার পরেই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে, কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল।”
গ্রামবাসীরা ব্যস্ত ছিলেন ক্ষতি নিয়ে আলোচনায়। এ দিনও প্রশাসন গ্রামে চিকিৎসক দল পাঠায়। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তাদের হিসেবে প্রায় ১৫০ বিঘা পাট, ১০০ বিঘা সব্জি, ৫০ বিঘা ধান এবং ১৫০-রও বেশি বড় গাছের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে। উল্টোকুঁড়ো থেকে শুরু করে চন্দেরপোঁতা হয়ে পুঁড়োর বিল পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকার ফসলের দফারফা হয়েছে। অজিত মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী তাঁর পুকুর দেখিয়ে বলেন, ‘‘গাছগাছালি এবং ধান-পাট তো আগেই মরেছে। এখন দেখছি পুকুরের মাছও মরছে।” বাদুড়িয়ার বিডিও তারক মণ্ডল-সহ পঞ্চায়েতের সদস্যেরা গ্রামে যান। চাষিরা ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত কাগজপত্র বিডিও-র হাতে তুলে দেন। বিডিও বলেন, ‘‘আগে এমন দেখিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy