যখন তাদের মনিবের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল তাদের, বেচারারা বেজায় ক্লান্ত। গলা দিয়েও আর স্বর বেরোচ্ছে না ভাল মতো। আর ক্লান্ত হবে নাই বা কেন? উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির রামপুরহাট থেকে ম্যাটাডরে চেপে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধকল সহ্য করে এসেছে ওরা। দু’তিন দিন ধরে ছাগল কেনা হয়েছে বিভিন্ন হাট থেকে। তিন-চার দিন ধরে ভাল মতো খাবার জোটেনি তাদের। কয়েক মাসের ছাগলগুলো পায়নি খাবার জলটুকুও। এমনকী, খোলা আকাশের নীচে আসতে গিয়ে ভিজে একসা হয়েছে বৃষ্টিতে। তবু চিৎকার না করে চুপচাপ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল তিন-চার মাসের অভুক্ত ছাগলগুলি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির পরিচালনায় বুধবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ছাগল বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে ছাগলগুলিকে যখন গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল, তখন তাদের এই দশা বাকিদের চোখ এড়ায়নি। ম্যাটাডর মালিক রহিত গায়েন বললেন, “এই ম্যাটাডরেই তিন দিন ওদের কাটাতে হয়েছে। রাস্তায় আসার সময় খিদেতে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার করেছে। যা খাবার দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হয় পেট ভরেনি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসল মনিবের হাতে তুলে দিলেই শান্তি।” রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায় পশুদের ভাল রাখতে নানা রকম উদ্যোগ নেন। ঘটনাটি শুনে তিনি বলেন, “পশুদের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো উচিত। ছাগলগুলিকে এ ভাবে নিয়ে গিয়েছে শুনেই রাগ হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ দফতরের মন্ত্রীকে জানাবো।”
পঞ্চায়েতের মাঠে ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। তিনি স্বয়ং একটি ছাগল তুলে দেন নেতাজি পঞ্চায়েতের শিবনগর গ্রামের রহিমা বিবির হাতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক অমিত নাথ, বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মোট ৯০টি ছাগল আনা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে ছাগলের মালিকানা নিতে আসা কয়েক জন সাদা ও বাদামী রঙের ছাগল নিতে আপত্তি করেছিলেন। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল, সেগুলি দেশি নয়। কিন্তু পরে উপস্থিত কাকদ্বীপ ব্লক প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক তপন দে তাঁদের বোঝান, এগুলি দেশি ছাগলই। তারপর তাঁরা ছাগল নিতে রাজি হয়। তপনবাবু বলেন, “ছাগলগুলো একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে ঠিকঠাক খাবার-দাবার পেলে সেরে উঠবে।”
ছাগল পেয়ে খুশি প্রত্যেকেই। সীতারামপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস সর্দার বলেন, “আমি একজন দিনমজুর। আমার আয়ে সাতজনের পরিবার ঠিকমতো চলছিল না। এই ছাগলগুলিকে পালন করে এবার আমারা রোজগার বাড়বে বলে আশা করছি।” এ দিন ছাগল বিতরণ অনুষ্ঠান ছাড়াও নিজ গৃহ নিজ ভূমি পাট্টা প্রদান, দুস্থ মৎস্যজীবিদের ব্যবহারিক জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন স্কুল ও ক্লাবের খেলার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। মন্টুরামবাবু বলেন, “দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা খুশি। ৯টি পঞ্চায়েতে বিভিন্ন প্রকল্পে গ্রামবাসীদের অনুদান দেওয়া হয়েছে।” এ রকম অনুষ্ঠান এখন থেকে লাগাতার চলবে বলে জানান মন্ত্রী মন্টুরামবাবু।