Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গিতে মৃত্যু দেগঙ্গার কিশোরের, এখনও নড়ে বসল না স্বাস্থ্য দফতর

মাস দেড়েক ধরেই দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়েছিল জ্বরের প্রকোপ। জ্বরের লক্ষণ ডেঙ্গির মতো বলেই দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মারাও গিয়েছেন কয়েক জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

মাস দেড়েক ধরেই দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়েছিল জ্বরের প্রকোপ। জ্বরের লক্ষণ ডেঙ্গির মতো বলেই দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মারাও গিয়েছেন কয়েক জন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরজিকর হাসপাতালে সুজিত কাহার (১৫) মৃত্যুর পরে সরকারি সূত্রেও জানা গেল, ছেলেটির প্রাণ গিয়েছে ডেঙ্গিতেই।

সুজিতের বাড়ি দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা ২ যাদবপুর গ্রামের পাড়ুইপাড়ায়। এর আগেও ওই এলাকার হাদিপুর ও চৌরাশি গ্রামে আরও ৬ জন মারা গিয়েছিলেন জ্বরে ভুগে। আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুজিতের মৃত্যু ডেঙ্গিতে হয়েছে বলে স্বীকার করায় বাসিন্দারা নতুন করে আতঙ্কে ভুগছেন। ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে তেমন ভাবে চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ এখানকার বহু মানুষের। বিডিও মানসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে শীঘ্রই ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

মাস দেড়েক আগে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছিল চামেলি ঘোষ নামে গাইঘাটার এক বধূর। গত কয়েক মাসে দেগঙ্গা এলাকায় অজানা জ্বরে মারাও গিয়েছেন কয়েক জন। এত দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলার দমদম, বরাহনগর, সোদপুর, বিরাটির মতো শহরতলি এলাকায় ছড়িয়ে ছিল ডেঙ্গির প্রকোপ। এ বার মফস্সল এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। তবে তা অবশ্য মানতে চায়নি স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের বক্তব্য, দুর্গাপুজোর সময় এই জেলায় ডেঙ্গির কিছুটা প্রকোপ দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্তে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৫। তবে সুজিতের মৃত্যু যে ডেঙ্গিতে হয়েছে, তা নিয়ে এখনও তথ্য নেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। বুধবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘দেগঙ্গায় মৃত যুবকের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ এখন কম। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। আতঙ্কের কিছু নেই।’’

সুজিতের পরিবার জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল সে। শুক্রবার তাকে হাড়োয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা আরজিকরে স্থানান্তরিত করেন। এরপরেই মৃত্যু হয় সুজিতের। মৃত্যুর শংসাপত্রেও ডেঙ্গির কথা উল্লেখ আছে। সুজিতের বাবা উত্তম কাহার বলেন, ‘‘ছেলের যে ডেঙ্গি হয়েছে, প্রথম দিকে তা জানতেই পারেনি। যখন জানতে পারলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’ গ্রামে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও সাহায্য তাঁরা পাননি বলেই জানিয়েছেন।

কয়েক মাস ধরে দেগঙ্গার হাদিপুর গভর্নমেন্ট কলোনি, সর্দারপাড়া ও শানপুকুর গ্রামে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষই বারাসত ও আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলেন। খবর জানার পরেও গ্রামে স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও প্রচার চোখে পড়েনি।

অক্টোবর মাসে অজানা জ্বরে মারা গিয়েছিলেন দেগঙ্গার হাদিপুর-ঝিকরা গ্রাম পঞ্চায়েতের আমদিয়া বিবি (৩৫)। তাঁর ছেলের দাবি ছিল ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ওই এলাকার কাজিতলা গ্রামের ১৬ বছরের খাদিজা খাতুন নামে এক নাবালিকার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গির পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই ওই ছাত্রী মারা যায়। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে অজানা জ্বরে আমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মরিয়াম বিবি (৪৫) মারা যান। তার পরের সপ্তাহেই একই দিনে অজানা জ্বরে দক্ষিণ মাটি কুমড়া গ্রামে শেরিনা বিবি (৪০) ও চিংড়িয়া গ্রামে ফতেমা বিবির (৫০) মৃত্যু হয়। এরই মাঝে জ্বরে ভুগে মারা যান শাহিদা বিবি (২৪) নামে আরও একজন।

ওই এলাকায় সে সময়ে ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর ছড়িয়েছিল। গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। অনেকের শরীর ফুলেও গিয়েছিল। দুপুরেও বাড়িতে মশারি খাটাতে শুরু করেছিল বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলি, আজগার আলি, রুহুল আমিন বলেন, ‘‘যে ভাবে জ্বরের উপদ্রব বাড়ছে, সে ভাবে প্রতিরোধের জন্য সরকারি কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।’’

তবে হাদিপুর-ঝিকরা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান নাসিরুদ্দিন মণ্ডল ও চৌরাশি পঞ্চায়েতের প্রধান কাসেব আলি মণ্ডলের দাবি, গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী নামানো হয়েছে। প্রতিষেধকেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে তার কোনও কিছুরই আঁচ পাননি বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE