Advertisement
E-Paper

তেল রঙা জল নিয়ে হাহাকার

তেল রঙের জল। ভূগর্ভে চোরা ফাটল ধরায় কোথাও বা জলের রং আরও চড়া, ঘোলাটে। জলাধারের নড়বড় কল দিয়ে সরু ফিতের মতো ‘সময়ের জলে’ও দুর্গন্ধ।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪০
তেলে-রঙা জল।

তেলে-রঙা জল।

তেল রঙের জল।

ভূগর্ভে চোরা ফাটল ধরায় কোথাও বা জলের রং আরও চড়া, ঘোলাটে।

জলাধারের নড়বড় কল দিয়ে সরু ফিতের মতো ‘সময়ের জলে’ও দুর্গন্ধ।

হিঙ্গলগঞ্জে এখন এমনই জলাতঙ্ক। ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত। সাহেবখালি নদীর পার বরাবর দুলদুলি, সাহেবখালি, গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ এবং কালীতলার মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে কুঁড়েখালি খাল। অন্য পারে ‘দক্ষিণ রায়’-এর ঠিকানা, ঘোর জঙ্গল। নদী-খালে টলটল করে নোনা জল। বাসিন্দারা বলেন, “জলের দেশে থাকি অথচ পানীয় জলের হাহাকারে গলা শুকিয়ে যায় বাবু!”

কুঁড়েখালি খালের পাশে ১, ২ এবং ৩ নম্বর সামশেরনগর। সেখানে জলের রং দেখলে মনে হয় ঘন সর্ষের তেল। সে জলে আর্সেনিকের প্রভাবও যথেষ্ট। তবু গ্রামীণ পদ্ধতিতে সামান্য ছেঁকে নিয়ে সেই লবণাক্ত জলেই কিঞ্চিৎ তেষ্টা মেটান গ্রামবাসীরা। রতন গাইন, রত্না মণ্ডলরা বলেন, “এ জলে বাঘের চেয়েও বেশি ভয়, কিন্তু গলা তো ভেজাতে হবে!”

নেতা-মন্ত্রীদের অবশ্য বছরভর প্রতিশ্রুতি আছে। আছে প্রশাসনের গতানুগতিক উত্তর ‘দেখছি।’ তবে তাতে তো জলের শুদ্ধিকরণ হয় না। তেষ্টাও মেটেনা। শুধু বেড়ে চলে জল-বাহিত রোগের প্রকোপ। হিঙ্গলগঞ্জ তবুও নাগাড়ে আব্দার করে চলে পরিশ্রুত জলের। কোনও সুরাহা নেই? বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেনের নির্বিকার জবাব, “জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সঙ্গে কথা বলে সুরাহার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে।” সেটা কি? স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি। বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলির প্রতিশ্রুতি, “মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেখা যাক, সুন্দরবনকে কী ভাবে মিষ্টি জল দেওয়া যায়।”

স্থানীয় প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, মাটির নীচে পানীয় জলের ঘোর অভাব। বারোশো ফুট নীচেও জলের দেখা নেই। কিন্তু মাটির নীচে ফাটা পাইপ তো মেরামত করা যায়? স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাছে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।

সামশেরগঞ্জের মহিলারা জল আনছেন দূরদূরান্ত থেকে।

অপরিস্রুত জলের পাশাপাশি হিঙ্গলগঞ্জ জুড়ে রয়েছে আর্সেনিক-আতঙ্ক। সে উদ্বেগ অমূলক নয়। দুলদুলি, সাহেবখালি পঞ্চায়েতের রমাপুর, সাহেবখালি, পুকুরিয়া, চাঁড়ালখালি, কাঁঠালবেড়িয়া-সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামগুলিতে জলের খোঁজে ভোর থাকতে উঠে গ্রামবাসীরা ছোটেন সময়ের কলে কলসি পাততে। দীর্ঘ সে লাইন আঁকাবাঁকা সাপের মতো, যেখানে জলের তীব্র হাহাকারের সঙ্গে রয়েছে কলহের রোজনামচা।

স্থানীয় সাঁতরা গ্রামে একটা পাম্প রয়েছে। গভীর নলকূপের জল সেখান থেকে পাইপ বাহিত হয়ে পাড়ি দিচ্ছে দুলদুলি। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে এলাকার বিভিন্ন জলাধারে। সেই সব জলাধারের নীচেই পড়ে জলের লাইন। দুলদুলি পাম্প হাউসের কর্মী সলিল মণ্ডল। বলছেন, “বেশ কয়েক বছর হল মাটির নীচে পাইপ ফেটে গিয়েছে। জলের সঙ্গে তাই মিশে যাচ্ছে বালি, মাটি। জলও পড়ছে সরু হয়ে।” তবু তাই সই। সকালে জল আনতে গেলে বেলা গড়িয়ে এক জ্যারিক্যান জল নিয়ে ঘরে ফেরা। পরিস্রুত পানীয় জলের নামে সেই জলেও মিশে আছে বালি, আর্সেনিকের আতঙ্ক।

মিশে আছে হিঙ্গলগঞ্জের হতাশাও।

—নিজস্ব চিত্র।

southbengal nirmal basu basirhat oil coloured water
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy