Advertisement
০২ মে ২০২৪

দুই বালুর লড়াই জমেছে বনগাঁয়

বালু বনাম বালুর লড়াই দেখল বনগা।ঁ এক বালু হলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জেলা রাজনীতিতে তো বটেই, রাজ্যেও বেশ পরিচিত মুখ। অন্য জন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী। উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে তুলনায় পরিচিত হলেও উত্তর ২৪ পরগনা তাঁকে চিনেছে কেবলমাত্র বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। বনগাঁর ভোটেও তাঁর উপরেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে দুই যুযুধান শিবিরের দুই নেতারই ডাকনাম বালু।

ডাকনামে যায় চেনা। বাঁ দিকে, বিজেপি ও ডান দিকে তৃণমূলের বালু।

ডাকনামে যায় চেনা। বাঁ দিকে, বিজেপি ও ডান দিকে তৃণমূলের বালু।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

বালু বনাম বালুর লড়াই দেখল বনগা।ঁ এক বালু হলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জেলা রাজনীতিতে তো বটেই, রাজ্যেও বেশ পরিচিত মুখ। অন্য জন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী। উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে তুলনায় পরিচিত হলেও উত্তর ২৪ পরগনা তাঁকে চিনেছে কেবলমাত্র বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। বনগাঁর ভোটেও তাঁর উপরেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে দুই যুযুধান শিবিরের দুই নেতারই ডাকনাম বালু।

তৃণমূলের বালুর কাছে বনগাঁর ভোট রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষা। মাস কয়েক আগেই এই জেলার আর এক উপনির্বাচনে শক্তহাতে হাল ধরেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি এ বার ভোটের দায়িত্বে নেই। দলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছে বলে নানা মহলে গুঞ্জন। ফলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে দায়িত্ব দেন, তা বড় চ্যালেঞ্জ বলতেই হবে।

গত ১৮ দিন ধরে তৃণমূলের বালু কার্যত বনগাঁর মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ভোটের ঘুঁটি সাজিয়েছেন একে একে। তাঁরই ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গেল, বৃহস্পতিবার ভোটের আগের রাতে শুতে গিয়েছেন প্রায় ৩টের সময়ে। উঠে পড়েছেন ভোর ৬টায়। সারা দিন জনা দু’তিন ঘনিষ্ঠ কর্মীকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যম তাঁর টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। ফোন করলে কখনও বলেছেন, “অশোকনগরে আছি”। কখনও উত্তর এসেছে, “এই তো হাববায় এসেছি ভাই।”

বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ যখন ধরা দিলেন, তখন নেতার মুখে চওড়া হাসি। সারা দিনের ধকলের পরেও বেশ খোসমেজাজে দেখাল। বনগাঁ-চাকদহ বাসস্ট্যান্ডে সাংবাদিক সম্মেলনের আগে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললেন, “হাবরা-অশোকনগরের মধ্যে একটা বাড়িতে ছিলাম। সেখানে বসেই খবরাখবর নিয়েছি। বিজেপির বহিরাগতরা কোথায় কোথায় ঢুকছে জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থাও নিয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।” ভোট মেশিনারি নিয়ে কিছু বলবেন না? উত্তরে একগাল হেসে বালুদার জবাব, “সেটা তো গোপন ব্যাপার। ও কি আর বলা যায়? পরের বারও তো ভোটটা করতে হবে নাকি!”

বস্তুত, শাসক দল সন্ত্রাস করতে পারে বলে বিজেপির তরফে নানা সময়ে অভিযোগ উঠলেও এ দিন কল্যাণী বিধানসভা কেন্দ্রে কিছু গোলমাল ছাড়া তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি গোটা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকায়। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “এ বার রেকর্ড ভোটে জিতব। ভাল ভোট হওয়ার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। বেশির ভাগ বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি। সেটা ওদের ব্যর্থতা।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন একেকটি বিধানসভা এলাকার জন্য কয়েক জন করে নেতা ও বিধায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যেমন, উপেন বিশ্বাস সামগ্রিক দায়িত্বে থাকলেও বাড়তি দায়িত্বে ছিলেন তাঁর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বাগদায়। পার্থ ভৌমিক ও রথীন ঘোষ ছিলেন স্বরূপনগরের দায়িত্বে। নির্মল ঘোষ আবার সাহায্য করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে। বেশ কিছু অটো এ বার বিভিন্ন এলাকার জন্য পাঠানো হয়েছিল। গ্রামের ভিতরে ঢুকে সেই অটোতে করে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত আনা-নেওয়া করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ভ্যান রিকশা রাখা হয়েছিল এই কাজে। তবে দলের পতাকা, ফেস্টুন ছিল না অটো-ভ্যানে।

বিজেপির স্থানীয় দায়িত্ব ছিল বিশ্বপ্রিয়বাবুর উপরেই। সঙ্গে ছিলেন হরিকৃষ্ণ দত্ত। ভোটের দিন বনগাঁর কালীবাড়ি মোড়ে তৈরি হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা আলাদা সেক্টর অফিস তৈরি করা হয়েছিল। এ ছাড়াও, কলকাতায় বসে গোটা ভোট প্রক্রিয়া দেখভাল করছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, শিশির বাজোরিয়া। দিল্লিতেও নেতারা নজর রেখেছিলেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

গত ২২ দিন ধরে বনগাঁয় ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন বিজেপির বালুও। বিশেষত, বসিরহাট দক্ষিণে প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যকে জিতিয়ে এনে তিনি ইদানীং দলের আস্থা পেয়েছেন। গুরু দায়িত্ব এ বারও প্রাণপণে সামলেছেন বিশ্বপ্রিয়। বললেন, “মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গেই আছেন।”

বিজেপি এ বার ভোটের দিনেও কিছু কৌশল কাজে লাগিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয়, সিপিএম বসে গিয়েছে। তাদের আর ভোট দিয়ে লাভ নেই। সেই ভোটটা যেন বিজেপির পকেটে আসে। তৃণমূল নেতা মুকুল রায় নতুন দল গড়তে চলেছেন বলেও চাউর করে দেওয়া হয়। যা তৃণমূল শিবিরে ভাঙন ধরানো তো বটেই, বামেদেরও ভোট কাটতে সাহায্য করবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির কিছু নেতার বিশ্বাস।

ভোটের আগে থেকেই দুই বালুই কার্যত দু’দলের হয়ে মূল দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু এত সবের পরেও অবশ্য ভোররাতে বড়মাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এ দিন মাস্টারস্ট্রোক খেলেছেন তৃণমূলের বালু। বিজেপি শিবির যদিও দাবি করছে, মতুয়ারা এই ঘটনা ভাল চোখে দেখেননি। ফলে দ্রুত এ বিষয়ে তলায় তলায় প্রচারও শুরু করে দেয় বিজেপি। শেষ লগ্নে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে তৃণমূল তাদের হাতে তুরুপের তাস তুলে দিল বলেই দাবি বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের। এ সব দাবি অবশ্য নেহাতই বালখিল্য বলে পাল্টা মন্তব্য করছেন তৃণমূলের বালু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arunakhya bhattacharya simanta maitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE