অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।
মাতালকে আর যা-ই বলো, ‘মাতাল’ বললেই মুশকিল!
অন্তত সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেল বনগাঁ পুলিশ।
বৃহস্পতিবার, দোলের দিন দুপুরে স্থানীয় মতিগঞ্জ এলাকায় রাস্তার উপরে মদ খেয়ে তখন রীতিমতো বেসামাল অবস্থা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির। চিৎকার-চেঁচামিচি, হল্লাবাজি, কখনও হো হো করে অট্টহাসি সব মিলিয়ে পরিস্থিতি পুরো নরক গুলজার। দোলের দিন এমনিতেই পুলিশের টহলদারি একটু বেশিই থাকে। তার পরে পালা-পার্বণে ডিউটি দিতে গিয়ে মেজাজও খিঁচড়ে থাকা অস্বাভাবিক নয় পুলিশ কর্মীদের। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে কথা শুরু করেছিলেন তাঁরা। গোলমাল না বাড়িয়ে ওই ব্যক্তিকে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশ।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! ‘নিজের টাকায় মদ খেয়ে’ তখন ধরা কে সরা জ্ঞানে উল্টো-পাল্টা বকে চলেছেন ওই ব্যক্তি। বলছেন, “ভাইটি, দোলের দিন নিজের টাকায় মদ খেয়েছি। তাতে পুলিশের কী?” পুলিশের পিতৃপুরুষকে টেনে এনেও যে দু’কথা শুনিয়ে দেননি তা নয়। মাথা গরম হতে থাকে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। জামার কলার ধরে সোজা গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে আসা হয় ওই ব্যক্তিকে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ কর্মীরা জানতেন, একবার লকআপে পুরতে পারলে বহু কড়াপাকের ক্রিমিনালও যেখানে ঘাপটি মেরে যায়, সেখানে এ তো নিরামিষ মাতাল! কিন্তু তখনও মাতালের মেজাজ পুরোপুরি টের পাননি পুলিশ কর্মীরা।
লকআপে ঢোকানোর পরে আবার আঁতে ঘা পড়েন মদ্যপ ব্যক্তির। লকআপের শিক ধরে গজরাতে থাকেন। থেকে থেকে বলতে থাকেন, “আমাকে মাতাল বলা। সব ব্যাটাকে দেখে নেব।” হম্বিতম্বি থামার লক্ষণই নেই। বরং ‘পিকচার’ তখনও অনেক বাকি।
পুলিশ কর্তাদের হুঁশিয়ার করে ওই ব্যক্তি বলথে থাকেন, “আমার ছেলেরা বাইরে অপেক্ষা করছে। একবার বাইরে বের হই। আমাকে ধরার মজা দেখিয়ে ছাড়ব সব পুলিশকে।”
থানার পুলিশ কর্মীরা তখন রীতিমতো উত্তেজিত। পারলে দু’এক ঘা কষিয়েই দেন। তবে তাঁদের শান্ত করেন থানায় উপস্থিত বনগাঁর এসডিপিও বিশ্বজিৎ মাহাতো। তিনি পুলিশ কর্মীদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন। বলেন, “আপনারা আর রাগারাগি করবেন না। উৎসবের দিন। একটু সহানুভূতি নিয়ে ভাবুন। বরং ওকে নিয়ে মজা করে দেখতে পারেন।” মাতাল অবশ্য তত ক্ষণে লকআপ থেকেই এসডিপিওকে দেখে তড়পে যাচ্ছে, “আমাকে কি দেখে মনে হচ্ছে আমি মদ খেয়েছি? আমি মাতাল? সব দেখে নেবো।” লকআপ থেকে কখনও গরুর ডাক, ছাগলের ডাক, কখনও পাখির ডাক ডেকে থানা সরগরম করে রেখেছেন ওই ব্যক্তি।
একটা সময়ের পরে ধীরে ধীরে নেশা কাটতে থাকে। হুজ্জুতও কমে। এ দিকে, স্বামীর খোঁজ নিতে তত ক্ষণে থানায় চলে এসেছেন স্ত্রী। মুখ কাঁচুমাচু করে স্বামীর হয়ে ক্ষমা চাইছেন তিনি তখন।
নেশা যখন পুরোপুরি নেমেছে বলে বোঝা গেল, থানার আইসি নন্দনকুমার পানিগ্রাহী ওই মদ্যপকে নিজের ঘরে ডেকে আনেন। সঙ্গে স্ত্রী। পুলিশ কর্তা ওই মদ্যপের কাছে জানতে চান, “কিছু মনে আছে?” জবাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন ওই ব্যক্তি। গোটা ঘটনা তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হলেও বিশেষ হেলদোল হয়নি। বলেছেন, “আমি কিছু করিনি। যা করেছে তা ওই মদই করেছে।” তবে আরও দু’চার কথার পরে অনুতপ্ত মনে হয় ওই ব্যক্তিকে। তাঁর স্ত্রী কথা দেন, “স্বামী আর কাণ্ড করবেন না। তিনিই জানান, ছেলে বাড়িতে না খেয়ে বসে আছে। বাবা এলে খাবে সে। শেষমেশ শুক্রবার সকালে থানা থেকেই ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পেশায় ভ্যান চালক ওই ব্যক্তি রেশন দোকানে দোকানে মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। আর কখনও মদ খেয়ে এমন হুজ্জুত বাধাবেন না বলে দু’কান ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন থানায়।
কিন্তু কোন বিপিনবাবুর কারণ সুধায় মজে এই অবস্থা হয়েছিল ওই ব্যক্তির, তা জানতে পারেনি পুলিশ। আবার ওই ব্র্যান্ডের মদ খেলে একই কাণ্ড ঘটবে না তো? ভয় পাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরাও। সে বার কিন্তু আর আইনের ফাঁক গলে ছেড়ে দেওয়া যাবে না ওই ব্যক্তিকে, সে কথাও বিলক্ষণ জানেন পুলিশ কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy