Advertisement
E-Paper

প্রতিশ্রুতিই সার, এখনও বিদ্যুৎ নেই নৈনানে

আড়াই বছর আগে বিদ্যুৎ হুকিং করার লাইন কাটতে গেলে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল মগরাহাটের নৈনান গ্রামের বাসিন্দাদের। পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রী ও গ্রামের মহিলার প্রাণও যায়। সরকারের তরফে দ্রুত বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও রাস্তা তৈরি-সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের প্রস্তুতি দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু এত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ এল না নৈনানে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০১:০৭
আড়াই বছরে পূরণ হয়নি রাস্তা সংস্কারের দাবিও। —নিজস্ব চিত্র।

আড়াই বছরে পূরণ হয়নি রাস্তা সংস্কারের দাবিও। —নিজস্ব চিত্র।

আড়াই বছর আগে বিদ্যুৎ হুকিং করার লাইন কাটতে গেলে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল মগরাহাটের নৈনান গ্রামের বাসিন্দাদের। পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রী ও গ্রামের মহিলার প্রাণও যায়। সরকারের তরফে দ্রুত বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও রাস্তা তৈরি-সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের প্রস্তুতি দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু এত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ এল না নৈনানে।

সামান্য কিছুটা পিচ রাস্তা, বিদ্যুৎ লাইনের সম্প্রসারণের কাজ ছাড়া আর কোনও কাজই হয়নি ওই গ্রামে। এখনও রাস্তায় কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কোনও কোনও জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে দূর থেকে হুকিং করেই বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন বাসিন্দারা।

নৈনান গ্রামে প্রায় চার হাজার লোকের বাস। মগরাহাটের কলসবাজার থেকে নৈনান গ্রাম প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা। ওই রাস্তায় বাগাচি গ্রাম পযর্ন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা ২০০৯ সালে জেলা পরিষদ থেকে পিচ করা হয়েছিল। বাকি নৈনান গ্রাম পযর্ন্ত ইট পাতা রাস্তা দিয়েই চলাচল হত। ওই বিদ্যুৎ-কাণ্ডের মাস ছয়েক পর সরকারের প্রতিশ্রুতি মত দেড় ইঞ্চি মোটা করে পিচ করা হয়। বছর ঘুরতেই অনেক জায়গায় পিচ উঠে গিয়ে ইট বেরিয়ে পড়েছে। গ্রামে ঢোকার রাস্তা ও ভিতরের যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা।

দিন কয়েক আগেই রাস্তার সংস্কারের দাবিতে বেহাল রাস্তার উপর ধান গাছের চারা রোপন করেছিলেন বাসিন্দারা। তাঁদের একাংশের দাবি, গ্রামবাসিদের একাংশের দাবী এই গ্রামের কিছুটা রাস্তা ক্রংক্রিট রাস্তা করার জন্য সংসদ তহবিল থেকে আড়াই লক্ষ টাকা কয়েক মাস আগেই অনুমোদন হয়েছিল। ওই টাকায় কিছু ইট ও বালি ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি।

গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ হলেও সব পাড়াতে খুঁটি না দেওয়ায় বাধ্য হয়েই দুর থেকে হুকিং করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন অনেকে। যেমন মল্লিকপাড়ার আব্দুল গনি মল্লিক, আব্দুল রহমান মল্লিকেরা জানান, দফতর থেকে ব্যবস্থা না করায় বাধ্য হয়ে হুকিং করে সংযোগ নিয়েছি। একই বক্তব্য, অন্য বাসিন্দাদেরও।

গ্রামে যে চার পাঁচটি পানীয় জলের নলকূপ রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই গ্রামের বিদ্যুৎ চুরি রুখতে হুকিং লাইন কাটতে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে জনা পঁচিশ, ত্রিশ পুলিশকর্মীও ছিলেন। বিদ্যুতের লাইন কাটতে আসার কথা শুনে গ্রামবাসীরা জড়ো হন মাদ্রাসা মাঠে। তাঁরা অভিযোগ করেন, গ্রামে সর্বত্র বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়নি। সমস্যা রয়েছে রাস্তা-ঘাট, পানীয় জলের সরবরাহ নিয়েও। তাঁরা বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে দেওয়া হলে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেবেন তাঁরা। পাশাপাশি, পরীক্ষা চলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন না করার জন্যও আবেদন করেন তাঁরা।

ইতিমধ্যে ওই দিন বিকেলে পুলিশের ২৫-৩০টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। গ্রামবাসীদের পাল্টা ইটের আঘাতে ৭জন পুলিশ কর্মী জখম হন। এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তার জেরে ওই গ্রামের মহিলা সাহেরা বিবি ও ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী রেসিনা খাতুনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে যায় একটি প্রতিনিধিদল। মৃতদের পরিবারের এক জনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। গ্রামের বিদ্যুৎ, রাস্তা, পানীয় জল ছাড়াও সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁরা।

কিন্তু এখনও চাকরি পাননি নিহতদের পরিবারের লোকজন। তবে রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতো দু’লক্ষ টাকা করে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতির পরেও কেন উন্নয়নের কাজ সেভাবে হল না? মগরাহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সহ-সভাপতি খইরুল হক লস্করের বক্তব্য, “এত তাড়াতাড়ি সব করা যায়নি। তবু সরকারের ঘোষণা মত ওই গ্রামে প্রায় সবর্ত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি পাড়ায় বাসিন্দারা জায়গা না দেওয়ায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানো যায়নি।” তাঁর দাবি, চার-পাঁচটি গভীর জলের নলকূপ বসানো হয়েছে। রাস্তাঘাটের কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে।

নিহতদের পরিবারের একজনের চাকরি প্রসঙ্গে সহ-সভাপতি বলেন, নিহত ছাত্রীর ভাইকে গ্রামীণ পুলিশে ঢোকানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সাহিরা বিবির স্বামীর জন্য পুলিশ ব্যারাকের রাঁধুনির কজের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যোগাযোগ করেননি।

অন্য দিকে, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রে খবর, নৈনান কাণ্ডের পর থেকে প্রায় আড়াই বছর ধরে হুকিং এর লাইন কাটার কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছে কোম্পানি। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির মগরাহাট শাখার স্টেশন ম্যানেজার শাশ্বতশেখর রায় বলেন, “নৈনান কাণ্ডের পর থেকে মগরাহাট এলাকা ‘হুকিং জোন’ হয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, ‘হুকিং’ রুখতে স্পট ক্যাম্প কানেকশনের ব্যবস্থা নিয়েছি। গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে মগরাহাট-২ বিডিও খোকন চন্দ্র বালা বলেন, “কিছু কিছু উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে।”

no electricity nainan dilip naskar mograhat southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy