আসন্ন বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে ভাল ফলের আশা করছে বিজেপি। যে কারণে উপ নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রচারে আনতে চাইছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিজেপি। এই মর্মে জেলার তরফে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নির্বাচনে প্রচারে প্রধানমন্ত্রীকে আনতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নির্বাচনের লড়াইয়ে আমরা এক ইঞ্চি জমিও তৃণমূলকে ছাড়ব না। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রথম সারির কয়েক জন নেতা ও কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এখানে প্রচারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।”
উত্তর ২৪ পরগনারই আর এক প্রান্ত বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। গোটা রাজ্যেই নানা ভাবে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে তারা। পুরুলিয়ায় একটি কলেজের ছাত্র সংসদও দখল করেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁয় লোকসভা উপনির্বাচন নিয়েও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তারা।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপির প্রার্থী হতে কামদেববাবুর কাছে ইতিমধ্যেই ১৪টি আবেদন জমা পড়েছে। তা তিনি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জেলা বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সব মিলিয়ে প্রার্থী হতে চেয়ে ৬৪টি আবেদন ও বায়োডাটা জমা পড়েছে। জেলা রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এর থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে, লোকসভা ভোটে বিজেপি কী রকম ফল করতে চলেছে।
রবিবারই বনগাঁ শহরে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে তাদের প্রথম প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্যের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমরেন্দু চট্টোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত, জেলার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার-সহ রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব। নদিয়া জেলা থেকেও নেতারা যোগ দিয়েছিলেন। ওই জেলার কল্যাণী ও হরিণঘাটা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত যে সাতটি বিধানসভা রয়েছে (বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা, গাইঘাটা, স্বরূপনগর, কল্যাণী ও হরিণঘাটা) সেখানে শীঘ্রই দলের একজন করে সর্ব ক্ষণের কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। কী ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে, তার একটি রূপরেখা বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলেছেন। দলের একটি সূত্র জানায়, লোকসভার উপ নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য রাজ্যের একজন নেতা গোটা দায়িত্বে থাকবেন। তৈরি হবে লোকসভা ও বিধানসভাভিত্তিক নির্বাচন কমিটি। বিধানসভা ভিত্তিক ওই কমিটিতে থাকবেন একজন ইনচার্জ ও একজন কো ইনচার্জ। প্রতিটি বিধানসভার জন্য থাকছেন একজন করে পর্যবেক্ষক। জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, “লোকসভার প্রতি ১০-১২টি বুথ-পিছু এক জন করে জেলা নেতা দায়িত্বে থাকবেন। মার্চ মাসের মধ্যে প্রতিটি বুথ-পিছু ২০০ জন করে সদস্য তৈরি করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।” বেশ কিছু বুথে ইতিমধ্যেই ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেও তাঁর দাবি। বিপ্লববাবুর কথায়, “আমাদের লক্ষ্য, সাংগঠনিক ভাবে নিজেদের চূড়ান্ত শক্তিশালী করে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানো।”
বনগাঁয় ভোট হবে এবং মতুয়াদের প্রসঙ্গ আসবে না, তা তো দীর্ঘ দিন হয়নি। যদিও গত বেশ কিছু ভোটে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে পাখির চোখ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, মতুয়াবাড়ির সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সখ্য দীর্ঘ দিনের। মতুয়া বাড়ির বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণকেই সাংসদ পদে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। তারও আগে কপিলের ভাই মঞ্জুলকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করেন। বস্তুত, মঞ্জুলই ছিলেন ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রথম ঘোষিত প্রার্থী। জেতার পরে মঞ্জুলকে রাজ্যের মন্ত্রীও করেছেন মমতা। নানা সময়ে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়ির জন্য মমতা ‘কল্পতরু’ হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলেছে। কপিলবাবুর মৃত্যুর পরে ফাটল ধরেছে মতুয়াবাড়িতে। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কেও চিড় ধরে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেও চলছে সব পক্ষ। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, “আমরা মতুয়া ভাবাবেগকে সম্পূর্ণ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের উন্নয়নের জন্য কী কী প্রয়োজন, তা ঠাকুরবাড়ির কাছ থেকে জেনে নিয়ে শীঘ্রই কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে।” জেলা বিজেপি চাইছে, প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মতুয়াদের উদ্দেশ্যে ও বনগাঁ লোকসভা এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে বার্তা দিয়ে যান।
বিজেপির তোড়জোড়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল শিবির। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “বনগাঁয় বিভিন্ন সময়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দরাজ হস্ত থেকেছেন। তা ছাড়া, মতুয়াদের আবেগও আমাদের সঙ্গে ছিল, থাকবেও। বিজেপি যতই লম্ফঝম্ফ করুক, এখানে ওদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। এই জেলাতে বিজেপি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিই নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy