Advertisement
E-Paper

বন্যার স্মৃতি টাটকা, মহালয়া না কাটলে জমে না পুজোর বাজার

দু’দিন আগেও বৃষ্টিতে ভেসেছে এলাকা। আকাশের এখনও মেঘের উঁকিঝুঁকি। পুজোটা ভালয় ভালয় কাটবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা ক্লাবের কর্মকর্তাদের মনে। তার উপরে বনগাঁর মানুষ তো ঘর পোড়া গরু। ২০০০ সালের বন্যার স্মৃতি এত বছর পরেও টাটকা। সে বার মহালয়ার আগের দিন থেকে বানভাসি হয়েছিলেন বনগাঁবাসী। ফলে পুজোর আগে আকাশ কালো হতে দেখলে বাসিন্দাদের বুক দুরু দুরু করে। পুজোর কেনাকাটাতেও যেন উৎসাহ পান না অনেকেই।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১২
এ বার পাড়ি অন্য দোকানে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এ বার পাড়ি অন্য দোকানে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

দু’দিন আগেও বৃষ্টিতে ভেসেছে এলাকা। আকাশের এখনও মেঘের উঁকিঝুঁকি। পুজোটা ভালয় ভালয় কাটবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা ক্লাবের কর্মকর্তাদের মনে। তার উপরে বনগাঁর মানুষ তো ঘর পোড়া গরু। ২০০০ সালের বন্যার স্মৃতি এত বছর পরেও টাটকা। সে বার মহালয়ার আগের দিন থেকে বানভাসি হয়েছিলেন বনগাঁবাসী। ফলে পুজোর আগে আকাশ কালো হতে দেখলে বাসিন্দাদের বুক দুরু দুরু করে। পুজোর কেনাকাটাতেও যেন উৎসাহ পান না অনেকেই।

২০০০ সালে মহালয়ার আগের দিন প্রশাসনের তরফে বাঁধের জল ছাড়ার ঘোষণা হয়েছিল। নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছিল অন্য জায়গায়। বন্যার জন্য নিজেদের খাওয়ার সংগ্রহ করতে হিমসিম খেতে হয়েছিল মানুষকে। এর মধ্যে অনেকেরই পুজোর কেনাকাটা হয়ে গিয়েছিল। ফলে হাতে সেই পরিমাণ টাকাও ছিল না হাতে। ১৪ বছর পরেও সেই দুর্দিনের কথা মাথায় রেখে মহালয়ার আগে বনগাঁর মানুষ পুজোর কেনাকাটায় তেমন উৎসাহ পান না। পুজোর আগে বৃষ্টি তাঁদের মনে আরও আতঙ্ক বয়ে আনে। তবে এ বার আকাশের মুখ ভার কিছুটা কেটেছে। এখন তাই কেনাকাটা চলছে পুরোদমে।

বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের দু’ধারের দোকানগুলিতে অবশ্য অনেক দিন আগে থেকেই পুজোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সম্ভার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। এ বিষয়ে শহরের এক জনপ্রিয় শাড়ির দোকানের পক্ষ থেকে ব্রজেন খাঁ বলেন, “দেড় মাস আগে থেকে মানুষ টুকটাক কেনাকাটা শুরু করেছে। কিন্তু এখন আরও ভিড় বাড়বে।” মোটামুটি অষ্টমীর সকাল পর্যন্ত পুজোর বাজার চলবে বলে দাবি তাঁর। তিনি আরও বলেন, “শহরের মানুষের প্রায় ৪০শতাংশ কেনাকাটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বার গ্রামের মানুষের ভিড় বাড়বে।” পাঁচপোতা, মামুদপুর, হেলেঞ্চা, গাঁড়াপোতার মতো বহু গ্রামীণ এলাকা থেকে মহালয়ার দিন এই শহরে পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। নাতি সৌম্যদ্বীপ বিশ্বাসকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কার্তিক বাইন। বললেন, “মহালয়া না গেলে পুজোর বাজার করি না। কারণ ২০০০ সালের সেই বন্যার চিত্র আজও ভুলিনি। সে দিন আমাদের বাড়ির ছাদে ৪০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।”

সমীর বিশ্বাস নামে এক ক্রেতারও একই বক্তব্য। এক জুতো দোকানের মালিক সুদীপ দে এ প্রসঙ্গে জানান, বৃষ্টির ফলে একটু বাজার খারাপ চলছিল। কিন্তু মহালয়ার পর থেকে বিক্রি বেড়েছে।” কার্তিকবাবু ও সমীরবাবুর মতো বহু ক্রেতাকেই দেখা যাচ্ছে জুতো, জামার দোকানে।

তা সত্ত্বেও বনগাঁর পুজোর বাজারের চেহারাটা অন্য রকম। কিছু কিছু দোকানদারের দাবি, এই মরসুমে এর থেকেও বেশি জিনিসপত্র বিক্রি হত। কিন্তু এখন এই এলাকায় তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বনগাঁ চেম্বার্স অব কর্মাসের সহ সম্পাদক দিলীপ মজুমদার বলেন, “চিটফান্ডে টাকা রেখে বহু মানুষ আজ সর্বস্ব খুইয়েছেন। তার প্রভাব কিছুটা হলেও পুজোর বাজারে পড়েছে। তা ছাড়া চাষিরা ধান, পাটের ঠিক মতো দাম পাচ্ছেন না।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, বিভিন্ন এলাকায় এলাকা ভিত্তিক এখন বাজার গড়ে উঠেছে। ফলে মানুষ এখন আগের মতো বনগাঁ শহরেই শুধুমাত্র কেনাকাটার জন্য আসেন না।

কৃষির পাশাপাশি সীমান্ত এলাকার অর্থনীতি চোরাচালান, পাচারের কাজের টাকার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। কিন্তু ইদানীং নজরদারি বাড়ায় পাচারের দাপট কমছে। সেই কারণেও মানুষের হাতে টাকা কম বলে মনে রকরেন ব্যবসায়ী মহলের একাংশ।

এক সময়ে দেখা যেত, বহু মানুষ বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আসত কেনাকাটা সারতে। কিন্তু ইদানীং সে দিকেও ভাটা পড়েছে। আর যাঁরা বৈধ পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে আসেন, তাঁরা বেশির ভাগই কলকাতা থেকে থেকে কেনাকাটা সারেন বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

pujo simanto moitro bangaon southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy