Advertisement
E-Paper

মদনের গ্রেফতারের প্রতিবাদে অবরোধ, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। কলকাতার বেসরকারি কলেজের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বছর কুড়ির ছাত্রটি তখনও ক্যানিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বাসস্ট্যান্ড হন্যে হয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। কী ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবেন জানা নেই। পরীক্ষা না দিতে পারলে একটা বছর নষ্ট। উদ্বিগ্ন হয়ে যাকে পারছেন জিজ্ঞেস করছেন, “কাকু, অবরোধ কখন উঠবে বলতে পারেন?” শেষ মুহূর্তে অতি কষ্টে তাঁর বাবা একটি গাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
ক্যানিং রেল লাইনে তখনও চলছে অবরোধ। ছবি: সামসুল হুদা।

ক্যানিং রেল লাইনে তখনও চলছে অবরোধ। ছবি: সামসুল হুদা।

প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। কলকাতার বেসরকারি কলেজের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বছর কুড়ির ছাত্রটি তখনও ক্যানিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বাসস্ট্যান্ড হন্যে হয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। কী ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবেন জানা নেই। পরীক্ষা না দিতে পারলে একটা বছর নষ্ট। উদ্বিগ্ন হয়ে যাকে পারছেন জিজ্ঞেস করছেন, “কাকু, অবরোধ কখন উঠবে বলতে পারেন?” শেষ মুহূর্তে অতি কষ্টে তাঁর বাবা একটি গাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।

শুধু ওই ছাত্রই নয়, মঙ্গলবার একই দুর্ভোগে নাকাল হলেন কলকাতায় কাজে যাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-অফিস যাত্রীরা। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ক্যানিং স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ করে ক্যানিং ১ ব্লক যুব তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “এ দিনের অবরোধের ফলে তিনটি ট্রেন বাতিল হয়েছে।” অন্য দিকে, যুব তৃণমূলের সভাপতি পরেশরাম দাস, জেলা পরিষদের তৃণমূলের সহ সভাধিপতি শৈবাল লাহিড়ির নেতৃত্বে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার এলাকা হয়ে স্টেশন পযর্ন্ত প্রতিবাদ মিছিলেরও আয়োজন করা হয়।

রাস্তা অবরোধের জেরে ক্যানিং-বারুইপুর রোডে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় সারি দিয়ে বাস, অটো, ট্রেকার দাঁড়িয়ে যায়। বাস-ট্রেন এক সঙ্গে অবরোধ হওয়ার ফলে কয়েক হাজার মানুষ ওই চত্বরে আটকে পড়েন। সকালে কাজে বেরিয়ে উপায় না দেখে অনেককেই বাড়ির ফিরতি পথ ধরতে হয়। এক পুলিশ অফিসারের এ দিন আলিপুর আদালতে খুনের মামলার সাক্ষী দেওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত মোটর বাইকে রওনা দিতে হল তাঁকে। হতাশ গলায় বললেন, “কোর্টে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। জানি না কপালে কী আছে!”

সকাল ৮টা ১৫-র আপ ক্যানিং লোকাল ধরে কলকাতায় কাজে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন হিঞ্চেখালির ভদ্রেশ্বর নস্কর, বাসন্তীর মশিবুল লস্কর, ক্যানিংয়ের গৌতম পাল, সবিতা সরকারেরা। স্টেশনে এসে দেখলেন, ট্রেনের ওভারহেড তারে কলা পাতা ফেলে, লাইনে দলীয় পতাকা পুঁতে ট্রেন অবরোধ করেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ওই যাত্রীরা বলেন, “আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এক দিন কাজে না গেলে মালিকের কাছে কথা শুনতে হবে। তা ছাড়া, এই এক দিনের রোজগার যে মার খেল, সে ক্ষতিপূরণ করবে কে?” ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এক কালে বলতেন বন্ধ, অবরোধ করে মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত করে কোনও আন্দোলন হবে না। এখন তাঁরই লোকেরা প্রতিবাদের নামে অবরোধ করে আমাদের মতো গরিবের পেটে লাথি মারছে। কাজে যেতে না পারলে যে খাওয়া জুটবে না, সে দিকে কারও খেয়াল নেই।”

রেল যাত্রীদের কাউকে কাউকে কটূক্তি করতে শোনা গেল, “সারদা কেলেঙ্কারি যখন প্রকাশ্যে এলো তখন কাউকে আন্দোলন করতে দেখা গেল না। এখন এক এক করে যখন নেতারা ধরা পড়ছেন, অমনি ওঁরা রাস্তা আটকে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। চুরি করে ধরা পড়েছে, এখন তদন্ত ঘোরাতে এ সব শুরু করেছে।”

শৈবালবাবু এ বিষয়ে বলেন, “লোকসভা ভোটে জেতার পরে একটি রাজনৈতিক দল মুখ্যমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে সিবিআই নামক একটি দফতরকে কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চক্রান্ত করে রাজ্যের নেতা-সাংসদদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে আমরা সকলে পথে নেমেছি।”

কিন্তু দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে বলেছেন, আন্দোলনের নামে অবরোধ করে মানুষের অসুবিধা করা চলবে না। তার কী হল? শৈবালবাবু বলেন, “মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। আমরা মানুষের স্বার্থেই আন্দোলন করছি। এতে যদি কারও সমস্যা হয়ে থাকে, সে জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”

ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার জীবনতলাতেও ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে একই দাবিতে মহামিছিল ও পথসভার আয়োজন হয়। ব্লক সভাপতি সওকত মোল্লা বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতির প্রতিবাদেই আজকের আমাদের এই আন্দোলন।”

অন্য দিকে, বনগাঁ শহরের ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কও এ দিন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কয়েকশো অটোরিকশা, ট্যাক্সি, অ্যাম্বুল্যান্স, ছোট গাড়ি নিয়ে অবরোধ চলে। প্রতিবাদ সভারও আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন রুট থেকে অটো তুলে আনায় সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়।

বনগাঁ শহরের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে ইছামতী নদী। দুই পাড় সংযোগকারী দু’টি সেতুর একটি অবরোধের জেরে বন্ধ থাকায় অন্য সেতুর উপর যান চলাচলের চাপ বাড়ে। গোটা শহরেই যানজট তৈরি হয়। পথ চলতি মানুষকে এখানেও যথেষ্ট বিরক্ত দেখা যায়। অবরোধে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর আঢ্য, শহর যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ, প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ প্রমুখ। প্রসেনজিৎবাবুও বলেন, “অবরোধের জেরে মানুষের সামান্যতম অসুবিধা হলেও আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু প্রতিবাদের কারণও আমরা সকলকে জানিয়েছি।”

madan mitra arrest protest rail blocade canning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy