সুরটা কাটল হঠাৎই।
বেলা তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। ভরা এজলাসে বসে আছেন বিচারক। ফাইলপত্র খুঁটিয়ে দেখে নিতে ব্যস্ত কালো কোট পরা, চশমা-আঁটা আইনজীবীরা। ভিড়ের মধ্যে চাপা ফিসফাসটুকুও করা বারণ। আদালতের পরিবেশ এমনিতেই স্বভাব-গম্ভীর। এরই মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে এজলাসে ঢুকে পড়ল তিন যুবক। তাদের মধ্যে পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক জন পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কোর্ট লকআপের দিকে তাক করে খচাখচ ছবি তুলতে শুরু করল। মুখে ঝুলছে বিশ্বজয়ের হাসি!
হাঁ হয়ে যান বিচারক। বাকিরাও থতমত। এ সব যে একেবারেই বারণ আদালত কক্ষে। সম্বিত ফিরতেই রে রে করে ওঠেন আদালতের পুলিশ কর্মী, আইনজীবীরা। ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। জানা যায়, গ্রামের লোকের কাছে নতুন কেনা ফোনে আদালতের ছবি দেখিয়ে বাহবা কুড়োনোই ছিল উদ্দেশ্য। আদালতের জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও) রণজিৎ মণ্ডল বলেন, “বিচারক এজলাসে বসে থাকাকালীন এক যুবক ছবি তুলছিল। বিচারকের নির্দেশে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।” বাকি দু’জন অবশ্য ভিড়ের মধ্যে সটকে পড়ে।
ঘটনার জেরে নিমেষে আদালত চত্বরে খবর রটে যায়, জঙ্গি ঢুকে পড়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার সুবাদে বসিরহাটে যে তা একেবারে অসম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ জানেন এলাকার মানুষজন। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকে পুলিশ-প্রশাসনও। এর আগে বসিরহাট থেকে পাকিস্তানি, বাংলাদেশি জঙ্গি গ্রেফতার হওয়ার নজিরও আছে। ফলে এ দিনের ঘটনাকে একেবারে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না পুলিশ। ওই যুবক সত্যি বলছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ওই যুবকের বাকি দুই সঙ্গীর খোঁজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আটক হওয়া যুবকের বয়স মেরেকেটে বছর কুড়ি। পুলিশকে সন্দেশখালির মঠবাড়ি এলাকার ওই যুবক জানিয়েছেন, এ দিন সকালে দুই বন্ধুকে সঙ্গে করে তিনি মোটরবাইকে এসেছিলেন বসিরহাটের বদরতলার একটি নার্সিংহোমে। সেখানে ভর্তি আছেন তাঁর স্ত্রী। ঈদের দিনই একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। মন-মেজাজ শরিফ। বসিরহাট আদালতের সামনে এসে তিন জনের ইচ্ছে হয়, ভিতরে ঢুকে একবার ঘুরে দেখবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তিন জনেই হইহই করে ঢুকে পড়েন এজলাসে। ছবিও তুলতে শুরু করেন। মোবাইলে ফ্লাশ ঝলসে ওঠায় সকলের চোখে পড়ে যান তিনি। স্তম্ভিত বিচারক পুলিশ কর্মীদের ওই যুবকদের ধরতে বলে নিজের ঘরে চলে যান। সেখানেই ডেকে পাঠান জিআরও-কে। পরে ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
ওই যুবকের কথায়, “মাছের ব্যবসা সামলাতে সামলাতে দিন কেটে যায়। শহরের দিকে বড় একটা আসা হয় না। মোবাইলটা নতুন কিনেছি। ভাবলাম চমৎকার ছবি ওঠে। আদালতের ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে গাঁয়ের লোককে দেখাব। কিন্তু আদালতে যে ছবি তোলা যায় না, তা তো জানতাম না।”
নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন দু’টো জিনিসের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওই যুবকের। বললেন, “যত নষ্টের গোড়া এই মোবাইলটা। আঙুল ঠেকালেই পটাপট ছবি ওঠে। প্রথম প্রথম বলে, যা দেখছি তারই ছবি তোলার নেশায় ধরেছে।” নিজের এক বন্ধুর উপরেও বেজায় চটেছেন তিনি। বললেন, “আমি না হয় বেশি দূর লেখাপড়া করিনি। এত নিয়ম-কানুন জানি না। কিন্তু আমার এক বন্ধু তো উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। এ সব তো ওর জানা উচিত। একবারটি বলল না! এ জন্যই বলে, ভাল বন্ধু না হলে পায়ে পায়ে বিপদ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy