Advertisement
১৯ মে ২০২৪

লক্ষ্মীপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডবে কার্যত বনধের চেহারা নেয় হাবরা

নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার করতে গিয়ে সোমবার জখম হয়েছেন হাবরা থানায় ছয় পুলিশ কর্মী-সহ ৯ জন। গত কয়েক দিন ধরেই শব্দবাজি আটক করার অভিযান চালানো হচ্ছে এই এলাকায়। তার কারণ হাবরার মানুষ অতীত অভিজ্ঞতায় জানেন, লক্ষ্মীপুজো বা কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি কী ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে গোটা এলাকা জুড়ে।

থানা চত্বরে বিস্ফোরণের পরে চলছে উদ্ধারের কাজ। ছবি: শান্তনু হালদার।

থানা চত্বরে বিস্ফোরণের পরে চলছে উদ্ধারের কাজ। ছবি: শান্তনু হালদার।

সীমান্ত মৈত্র
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার করতে গিয়ে সোমবার জখম হয়েছেন হাবরা থানায় ছয় পুলিশ কর্মী-সহ ৯ জন। গত কয়েক দিন ধরেই শব্দবাজি আটক করার অভিযান চালানো হচ্ছে এই এলাকায়। তার কারণ হাবরার মানুষ অতীত অভিজ্ঞতায় জানেন, লক্ষ্মীপুজো বা কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি কী ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে গোটা এলাকা জুড়ে।

বাতাসে বারুদের গন্ধ, কানে আঙুল গুঁজে সভয়ে চলা পথচারী, তিতিবিরক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অসুস্থ মানুষ সব মিলিয়ে পুজোর রাতে এমন বহু টুকরো ছবি ভেসে ওঠে হারবার আনাচ-কানাচে। শব্দের চোটে বাড়িতেও তিষ্ঠোতে পারেন না কেউ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ পথে বের হন না। অঘোষিত বনধের চেহারা নেয় গোটা শহর। দোকানপাট বেশির ভাগই বন্ধ থাকে।

পুজোর আগের ক’দিন বিভিন্ন দোকানে গোপনে বা প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় শব্দবাজি। পুলিশ খুব একটা গা ঘামিয়ে ব্যবস্থা নেয় না বলেই অভিযোগ। দুর্গাপুজোতে সে ভাবে না হলেও লক্ষ্মীপুজো এবং কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপটে আতঙ্কে থাকেন বহু মানুষ। হাবরা বাজার, উত্তর হাবরা, দক্ষিণ হাবরা, জয়গাছি, কামারথুবা, বাণীপুর, হাটথুবা, চোংদা-সহ প্রায় সব এলাকাতেই চলে শব্দবাজির লাগামছাড়া তাণ্ডব। বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশি টহলের মধ্যেও সন্ধ্যার পর থেকে শব্দবাজির প্রকোপ বাড়ে। স্থানীয় এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, “প্রতিবারই শুনি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে সে সব চোখে পড়ে না। এ বারও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেখা যাক, লক্ষ্মীপুজোর রাতে কী হয়।” অনেকে জানালেন, যে ভাবে বাজি ফাটে তাতে স্নায়ুরোগ বা হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষ সমস্যায় পড়েন। এত শব্দবাজি কোথা থেকে আসে, পুলিশ তার হদিস পায় না। বাসিন্দারা এটাকেই কার্যত ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন।

সোমবার হাবরা থানা চত্বরে বাজি বিস্ফোরণের পরে হাবরাবাসীর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, অন্তত এ বার নড়ে বসুক পুলিশ। যদিও বাজি বাজেয়াপ্ত করে আনার পরেই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, এত বাজি এলাকায় ঢোকাটাই যদি বন্ধ করা যায়, তা হলে বিক্রিও হবে না। তা ছাড়া, পুলিশ যদিও আরও কড়া হয়, তা হলে রাস্তাঘাটে বাজি বিক্রি বা পুজোর দিনে বাজি ফাটানো সত্যি সত্যি বন্ধ না হোক অন্তত কমানো যেতে পারে। পুলিশ কর্তাদের একাংশের আবার মত, নাগরিকেরা নিজেরা যদি সচেতন না হয়ে শব্দবাজি কিনেই চলেন, তা হলে শুধু আইনরক্ষকদের পক্ষে নজরদারি চালিয়ে সমস্যার সামগ্রিক সমাধান সম্ভব নয়।

স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য যে ভাবেই হোক, এই সমস্যার সুরাহা সম্ভব বলে মনে করেন। সোমবার তিনি বলেন, “হাবরায় শব্দবাজির দাপট বন্ধ করবই। মানুষের কাছে আবেদন করছি, আপনারা শব্দবাজি ফাটাবেন না। পুলিশকে বলেছি, যারা শব্দবাজি বিক্রি করবে বা ফাটাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে।” হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষের কথায়, “মঙ্গলবার এ নিয়ে পুরসভায় বৈঠক হবে। মানুষকে শব্দবাজি নিয়ে সচেতন করতে মাইকে প্রচার চালানো হবে। ব্যবসায়ীদের কাছেও আবেদন করা হবে, তাঁরা যেন শব্দবাজি বিক্রি না করেন।” পুরপ্রধান জানান, সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখা হবে, তাঁরা যেন শব্দবাজি না ফাটান। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শব্দবাজির বিরুদ্ধে হাবরায় কড়া ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। তল্লাশি চলছে। তা আরও বাড়ানো হবে।”

সোমবার হাবরা থানা চত্বরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জখম হয়েছেন বিশ্বনাথ কুণ্ডু। তিনি থানার কোয়ার্টারে কাজ করেন। মাঝে মধ্যে এটা ওটা দিতে আসেন থানায়। এ দিনও আসছিলেন।

বিস্ফোরণের মধ্যে পড়ে যান। থানার সামনে যশোহর রোডের ধারে একটি হোটেলে কাজ করেন আশুতোষ কর। তিনিও জখম হয়েছেন বিস্ফোরণে। ওই হোটেলরই এক কর্মী কিশোর বিশ্বাস বলেন, “দুপুরের দিকে হঠাৎ ভয়ানক জোরে শব্দ এল থানা থেকে। কী হয়েছে তখনও বুঝিনি। ভাবলাম, আশুতোষ গিয়েছে ওখানেই। দেখি কী অবস্থা। দৌড়ে গিয়ে দেখি ও মাটিতে পড়ে ছটফট করছে।

থানার সামনে চায়ের দোকান আছে প্রমথ মজুমদারের। তিনি শব্দ শুনে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দেন। আশপাশের আরও অনেকেই জঙ্গি হামলা হয়েছে মনে করে দৌড় দেন।

বাজি নিয়ে এত কাণ্ডের পরে এখন দেখার, লক্ষ্মীপুজোর রাতটা কেমন কাটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE