মেলার মাঠে দর্শকের ভিড়। নৈহাটিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নৈহাটি উত্সব, শ্যামনগরে পৌষ মেলা, কল্যাণীতে নাট্য মেলা, শিশুমেলা, আগরপাড়ায় সুকুমার মেলা সব মিলিয়ে শীতের মরসুমে উত্সবের মেজাজ গঙ্গাপারের শিল্পাঞ্চলে।
মেলাকে ঘিরেই ব্যস্ত শিল্পাঞ্চল যেন আরও বেশি ব্যস্ত। এই মেলাগুলিতে এলাকার বাইরের লোকজনের ভিড়ও নেহাত কম নয়। শীত পড়তে না পড়তেই কলকাতায় বিভিন্ন মেলা, বিড়লা মিউজিয়াম ও চিড়িয়াখানায় ছেলে থেকে বুড়ো সকলের ভিড় জমে। শিল্পাঞ্চলে ধুলো-ধোঁয়ার মধ্যে মেলা আর উত্সবের আয়োজন আগে বিশেষ ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে রুগ্ন শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কল-কারখানার কুলি লাইনের দীর্ঘশ্বাসের মধ্যেই কোথাও পাঁচ দিন আবার কোথাও সাত দিনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া কুলি, শ্রমিক থেকে উচ্চবিত্তের মানুষের ভিড় জমে শিশুমেলা থেকে বইমেলা, গানমেলা সর্বত্র। তবে তা যে শুধু গান, বই বা কোনও মেলার কৃষ্টির টানে তা নয়। ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলের একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি দেয় ঘরের কাছে হওয়া এই মেলাগুলি, এমনটাই অভিমত অধিকাংশ বাসিন্দার।
মেলা মানে খাওয়া দাওয়া তো থাকবেই। তা সে যে মেলাই হোক। ফুচকা, ভেলপুরি, চাট মশলা থেকে চিকেন বার্গার বা বিরিয়ানির স্টলের সামনে থিকথিকে ভিড়। নৈহাটি উত্সবের মধ্যে চলা সবলা মেলায় বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরির উপকরণের দোকানেও লম্বা লাইন চোখে পড়ার মতো। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো চিড়িয়াখানায় না গিয়ে নৈহাটির সাপ ও পাখির মেলাতেও নিত্যদিন যাচ্ছেন বহু মানুষ। নাট্যপ্রেমী মানুষের জন্য নাট্যমেলা চলছে ব্যারাকপুর ও কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি টাউন হলেই। কল্যাণীতে ফি বছর বঙ্গ সংস্কৃতি উত্সব বেশ বড় আকারেই গান মেলার আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খ্যাতনামা শিল্পীরা সেখানে যান। ব্যারাকপুর গাঁধী মিউজিয়ামে শিশুমেলায় এবার সর্বস্তরের ছোটরা কথা বলবে শখের রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষজনের সঙ্গে। নৈহাটি, শ্যামনগরেও বন্ধ কারখানার কুলি লাইনের খুদেদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও মেলবন্ধনের অনুষ্ঠান চলছে।
সব মিলিয়ে মেলাময় শিল্পাঞ্চলে বাণিজ্যও নেহাত মন্দ হচ্ছে না দাবি মেলা কমিটিগুলির। নৈহাটি উত্সবে খাবার দোকান থেকে কলকাতার বই প্রকাশন সংস্থা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা বেশ ভাল জমেছে। হাতের কাজের দোকানগুলিতেও শিল্পী-ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। শ্যামনগর পৌষ মেলাতে রবি শর্মা নামে এক তেলেভাজা বিক্রেতা বললেন, “মেলা থেকে গোটা বছরের মোট আয়ের একটা বড় অংশ উঠে আসছে এখন।” শিল্প হোঁচট খেলেও মেলার উপর ভর করে খুচরো ক্ষুদ্র বাণিজ্য আশার মুখ দেখাচ্ছে ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy