Advertisement
E-Paper

কন্যাশ্রীর কবিতায় পুরস্কৃত তিন কন্যা

মেয়ে যে কবিতা লেখে বাবা নিজেই সেটা জানতেন না। জানলেন, যখন সাঁওতালি ভাষায় অভাগীয়ার লেখা কবিতা একই সঙ্গে রাজ্য এবং জেলা স্তরে পুরস্কার পেল। আজ, রবিবার সে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেবে। আর পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে তার হয়ে পুরস্কার নেবেন অভাগীয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর অসিত হেমব্রম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৯
অভাগীয়া হেমব্রম ও গুলনার পরভীন। —নিজস্ব চিত্র

অভাগীয়া হেমব্রম ও গুলনার পরভীন। —নিজস্ব চিত্র

মেয়ে যে কবিতা লেখে বাবা নিজেই সেটা জানতেন না। জানলেন, যখন সাঁওতালি ভাষায় অভাগীয়ার লেখা কবিতা একই সঙ্গে রাজ্য এবং জেলা স্তরে পুরস্কার পেল। আজ, রবিবার সে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেবে। আর পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে তার হয়ে পুরস্কার নেবেন অভাগীয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর অসিত হেমব্রম। একগাল হাসি নিয়ে শনিবার তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা সত্যিই কন্যাশ্রী।’’

বিভিন্ন ভাষায় কন্যাশ্রী বিষয়ক কবিতা লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগ। তার মধ্যে রাজ্য স্তরে সাঁওতালিতে প্রথম এবং উর্দুতে তৃতীয় হয়েছে পুরুলিয়ার দুই কন্যা অভাগীয়া হেমব্রম এবং গুলনার পরভীন। সাঁওতালিতে রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় পুরস্কারও গিয়েছে বাঁকুড়ার ঝুলিতে। খাতড়া শিশু নিকেতনের অপর্ণা সোরেন পেয়েছে সেই পুরস্কার।

অভাগীয়া বোরো থানার কৃষ্ণপুর জুনিয়ার হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বা়ড়ি কৃষ্ণপুর গ্রামে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরোজকান্তি দে জানান, কিছু দিন আগে ব্লক অফিস থেকে প্রতিযোগিতার কথা জানিয়ে ছাত্রীদের থেকে কন্যাশ্রী বিষয়ে কবিতা চাওয়া হয়েছিল। স্কুলের বেশ কিছু ছাত্রী সেই প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। বুধবার তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের ছাত্রী অভাগীয়া সাঁওতালিতে যে চারটি পঙ্‌ক্তি লিখেছিল তা রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার আগে খুশিতে ফুটছে অভাগীয়া। সে বলে, ‘‘স্যারেরা বলেছিলেন, কন্যাশ্রী নিয়ে চার লাইনের কবিতা লিখতে হবে। আমি আমাদের রোজকার, চারপাশের কথাই লিখেছি। ভাবতে পারিনি প্রথম হব।’’ শিক্ষকেরা জানান, জেলা স্তরের প্রতিযোগিতাতেও সাঁওতালিতে অভাগিয়া এবং বাংলায় তারই এক সহপাঠী পুরস্কার পেয়েছে। সরোজবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রীদের কেউই নিয়মিত কবিতা লেখে না। এই সুযোগ পেয়ে তাদের নিজেদের জীবনের কথা নিজেদের মতো করে তারা শুধু বলেছে। আর তার ফলেই তাদের কথা পৌঁছে গিয়েছে সারা রাজ্যে। সেই সঙ্গে স্কুলের নামও।’’

শনিবারই পুরুলিয়া শহরের ডিগুডি পাড়ার নিম্নবিত্ত পরিবারের আরও এক কন্যাশ্রী গুলনার পরভীন স্কুলের এক শিক্ষিকার সঙ্গে রওনা দিয়েছে কলতার পথে। আজ সেও গিয়ে দাঁড়াবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে। পুরুলিয়া আয়েষা কাচ্ছি উর্দু বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী গুলনার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ আনহার হোসেন জানান, গুলনারের বাবা শেখ আলমের একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে, পুরুলিয়া আদালতের সামনে। গুলনার বলে, ‘‘জীবনই আমাকে নিজের অধিকারের কথা বলতে শিখিয়েছে। সেটাই শুধু লিখেছি কবিতায়।’’ রাত পোহাতেই কন্যাশ্রী দিবসে হাজার মানুষের হাততালি আর আলোর মধ্যে গিয়ে দাঁড়াবে সে। তার আগে কেমন লাগছে? শান্ত মেয়েটি বলে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীও এক জন মহিলা। তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নেব ভাবতেই ভাল লাগছে।’’

অপর্ণা সোরেনেরও পরিবারে অনটন। তালড্যাঙরা থানার তালতলা গ্রামে তার বাড়ি। বাবা সতীলাল সোরেনের একার আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মামা শশীলাল হেমব্রমের বাড়িতে থেকে খাতড়া শিশু নিকেতন অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে অপর্ণা। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় সাঁওতালিতে দ্বিতীয় হয়েছে সে। শশীলালবাবু জানান, নিজের মনে মাঝে মধ্যেই ছড়া লিখত অপর্ণা। তার থেকে যে একেবারে এমন পুরস্কার পাবে, তা ভাবতে পারেননি তাঁরাও। আর অপর্ণা? লাজুক হেসে সে শুধু বলে, ‘‘বড্ড ভাল লাগছে।’’

ভবিষ্যতে মেয়কে নামজাদা কবি হিসেবে দেখতে চান? প্রশ্নের জবাবে তিন কন্যার বাবারাই জানিয়েছেন, তাঁরা শুধু চান নিজের পায়ে দাঁড়াক। অপর্ণার মামা শশীলালবাবু বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী বড় কাজের জিনিস। ওকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।’’

Kanyashree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy