Advertisement
১১ মে ২০২৪
tourism

Kashmir: শীতের ভূস্বর্গে সাইকেলে পাড়ি তিন বাঙালির

অভিযাত্রী: সাইকেল নিয়ে তুষারে মোড়া পহেলগাঁওয়ে।

অভিযাত্রী: সাইকেল নিয়ে তুষারে মোড়া পহেলগাঁওয়ে। নিজস্ব চিত্র।

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৮
Share: Save:

টানা ২১ দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ন’ঘণ্টা সাইকেল চালানো। দু’চাকায় ভর করে কখনও ৬০-৭০ কিলোমিটার, কখনও বা ১০০ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছনো। কোনও দিন আবার সারা দিন প্যাডেল করেও ৩০ কিলোমিটারের বেশি এগোনো যায়নি। মাইনাস ডিগ্রির ঠান্ডা বা তুষারপাতের মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে প্রায় হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ ভাবেই শীতের ভূস্বর্গের আনাচেকানাচে সাইকেল নিয়ে ঘুরলেন তিন বাঙালি যুবক।

অতিমারি পরিস্থিতিতে প্রায় দু’বছর ঘরবন্দি ছিলেন ওঁরা। করোনা সংক্রমণ সে সময়ে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় শীতের কাশ্মীরকে দেখতে হৃদয়পুরের চন্দন বিশ্বাস, সোনারপুরের রাহুল হালদার এবং অভীক মণ্ডল বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন গত ৩ ডিসেম্বর। তবে আর পাঁচ জন পর্যটকের মতো নয়। অচেনা কাশ্মীরকে তাঁরা চিনতে চেয়েছিলেন অন্য ভাবে। তাই সঙ্গী হিসাবে নিয়েছিলেন সাইকেল। ৭ ডিসেম্বর শ্রীনগর থেকে সাইকেল যাত্রা শুরু করে উত্তর কাশ্মীরের গুরেজ় উপত্যকা ছুঁয়ে কুপওয়ারা, লোলাব উপত্যকা, বাঙ্গাস উপত্যকা, গুলমার্গ, পহেলগাঁও, কাজ়িগুন্দ হয়ে সোজা অমৃতসরের ওয়াগা সীমান্তে এসে শেষ হয় অভিযান।

কেমন ছিল অভিযানের অভিজ্ঞতা? কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছিলেন তাঁরা? রাহুল-অভীকেরা জানাচ্ছেন, উত্তর কাশ্মীরের সীমান্ত ছুঁয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাইকেলে সীমান্তের গুরেজ় উপত্যকা যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তুষারপাতের কারণেও পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করতে হয়েছে। তবে যেখানেই গিয়েছেন, সেখানে কাশ্মীরিদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা ছিল মনে রাখার মতো। চন্দনের কথায়, ‘‘যে গ্রামেই গিয়েছি, পরিচয়ের পরে জোর করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। খেতে দিয়েছেন, আপেল উপহার দিয়েছেন। কোনও কোনও দিন পথে একাধিক বার পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়েছে বটে, তবে বাকি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল।’’ তিন বাঙালিকে সাইকেলে কাশ্মীরের পথে দেখে স্থানীয়েরা বিস্মিত হলেও তাঁদের উষ্ণ আন্তরিকতায় কোনও ফাঁক রাখেননি বলেই জানাচ্ছেন ওই তিন অভিযাত্রী।

অ্যাডভেঞ্চারের নেশা বরাবরই রয়েছে চন্দন-রাহুলদের। ২০১৭ সালে সাইকেলে ট্রান্স হিমালয় অভিযান করে রেকর্ড করেছিলেন চন্দন। পাঁচ মাসের সেই অভিযানে পাড়ি দিয়েছিলেন ছ’হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ। এ বার প্রায় ২০ কেজি ওজনের জিনিসপত্র বাহনের উপরে চাপিয়ে শীতের কাশ্মীরে পেরিয়েছেন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা। কখনও তুষারপাতের মধ্যে সাইকেল ঠেলে পৌঁছেছেন গন্তব্যে, কোথাও বরফের কারণে মাঝপথ থেকেই ফিরতে হয়েছে। চন্দনের কথায়, ‘‘পহেলগাঁও থেকে তুলিয়ান লেক ট্রেকে গিয়ে তুষারপাতের কারণে ফিরে আসতে হয়েছে, শেষ অবধি পৌঁছতে পারিনি। তুষারপাত আর পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে সাইকেলে পহেলগাঁও থেকে অনন্তনাগ পৌঁছনোর সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।’’

ভূস্বর্গ অভিযান শেষ হলেও সাইকেলে অ্যাডভেঞ্চারের এখানেই ইতি নয়। অদূর ভবিষ্যতে অন্য কোনও পাহাড়ে, এই সাইকেলকে সঙ্গী করেই পথে নামবেন চন্দনেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tourism kashmir Bicycle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE