বাসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে লোহার পাত। চলছে উদ্ধার। ছবি: সুব্রত জানা।
ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। লোহার পাত বোঝাই ট্রেলার ছুটছিল মুম্বই রোড ধরে। ডালা থেকে বেরিয়ে থাকা পাত বাঁধা থাকলেও পিছনের গাড়ির চালকদের সতর্ক করার জন্য তাতে লাল শালু জড়ানো ছিল না। জ্বলছিল না লাল আলোও। পুরী ফেরত একটি বাস প্রবল গতিতে এসে ধাক্কা মারে সেই ট্রেলারে। বাসের কেবিনের কাচ ভেদ করে লোহার পাত ঢুকে যায় ভিতরে। শনিবার ভোর সওয়া তিনটে নাগাদ হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক বালিকা-সহ জগৎবল্লভপুরের সিদ্ধেশ্বর গ্রামের পাঁচ বাসযাত্রীর। আহত হন অন্তত ৩১ জন।
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন রবি মাখাল (৫০), প্রদীপ জানা (৪০), দেবস্মিতা ঘুকু (১১), লক্ষ্মীকান্ত রায় (৪০) এবং অসীমা পাত্র (৭০)। লক্ষ্মীকান্ত বাসের খালাসি ছিলেন। আহতদের প্রথমে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এক মহিলা-সহ তিন জনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।
দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘বাসটির গতি অনেক বেশি ছিল। তার ফলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারে। ট্রেলারটি কেন লাল আলো জ্বালায়নি বা শালু বাঁধেনি, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ দু’টি গাড়িই পুলিশ আটক করেছে। তবে, চালকেরা পলাতক। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা পাশে রয়েছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিদ্ধেশ্বর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের উদ্যোগেই বাসে পুরী বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। ৭৮ জন যাত্রী নিয়ে গত ২ জানুয়ারি বাসটি রওনা হয়। শুক্রবার বাসটি ফিরছিল। শনিবার ভোরে বাসটি যখন কুলগাছিয়ায় এসে পৌঁছয়, তখন সেখানকার একটি কারখানা থেকে লোহার পাত বোঝাই করে বেরিয়ে ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে মুম্বই রোডের কলকাতামুখী লেনে উঠে গতি বাড়াচ্ছিল ট্রেলারটি। তখনই দুর্ঘটনা। বাসের কেবিনটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। যাত্রীদের চিৎকারে স্থানীয়েরা এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। আসে পুলিশ, দমকল। বাসের জানলা ভেঙে আহতদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রবি, প্রদীপ, দেবস্মিতা এবং লক্ষ্মীকান্তের। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান অসীমাদেবী।
দুর্ঘটনায় আহত, উলুবেড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সঞ্জু ঘুকু বলেন, ‘‘পিছনের আসনে বসে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি। ঘুম ভেঙে গেল। বুঝলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ বাসে চালকের আসনের পাশেই বসেছিলেন পার্থ পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেলারটির কাথাকাছি গিয়েই বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বুঝতে পেরে চালক লাফিয়ে নেমে পড়ে। আমিও লাফ দিতে যাই। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমার পা আটকে গিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy