Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বন্ধ ৫৭টি প্রাথমিক স্কুল

শাসক দলের রোষের ভয়ে শিক্ষকেরা সভায়

শাসক দলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সম্মেলন ‘সফল’ করতে হাজিরা ছিল ‘বাধ্যতামূলক’। পঠনপাঠন শিকেয় তুলে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ৫৭টি প্রাথমিক স্কুল তাই কার্যত বন্ধ রইল বৃহস্পতিবার। স্কুল শিক্ষকদের অনেকেই কবুল করছেন, ‘অনিচ্ছা’ সত্ত্বেও, তৃণমূলের ‘রোষ’ থেকে বাঁচতে মঙ্গলকোটে নিগনের কমিউনিটি হলে এ দিনের সম্মেলনে যেতে ‘বাধ্য’ হয়েছিলেন তাঁরা।

মঙ্গলকোটে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্মেলন।—নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলকোটে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্মেলন।—নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

শাসক দলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সম্মেলন ‘সফল’ করতে হাজিরা ছিল ‘বাধ্যতামূলক’। পঠনপাঠন শিকেয় তুলে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ৫৭টি প্রাথমিক স্কুল তাই কার্যত বন্ধ রইল বৃহস্পতিবার।

স্কুল শিক্ষকদের অনেকেই কবুল করছেন, ‘অনিচ্ছা’ সত্ত্বেও, তৃণমূলের ‘রোষ’ থেকে বাঁচতে মঙ্গলকোটে নিগনের কমিউনিটি হলে এ দিনের সম্মেলনে যেতে ‘বাধ্য’ হয়েছিলেন তাঁরা। এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বলছেন, ‘‘শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন বলে কথা, সম্মেলনে না গেলে ওদের রোষে পড়লে কে পাশে দাঁড়াবে বলুন তো!’’

আতঙ্কের সেই ছায়ায় স্কুলের পথ না মাড়িয়ে, মঙ্গলকোটের কমিউনিটি হলে যাওয়ার রাস্তাই ধরেছিলেন ব্লকের ২১২ জন শিক্ষকের প্রায় সকলেই। সংগঠনের পক্ষ থেকে এই গণ-হাজিরার কথা স্বীকারও করা হয়েছে। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘শিক্ষকেরা প্রায় সকলেই এসেছিলেন ঠিকই, তবে সম্মেলনের পাশাপাশি এ দিন মঙ্গলকোট-৩ নম্বর চক্রের স্কুলপরিদর্শক গোপালচন্দ্র পাল পদোন্নতি পেয়ে জেলা সহকারী পরিদর্শক হয়ে গেলেন কিনা, তাই তাঁকে সংবর্ধনারও আয়োজন করা হয়েছিল।’’ সে জন্যই সকলকে আসতে বলা হয়েছিল, দাবি তাঁর।

ওই স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, শিক্ষকদের সম্মেলনে হাজিরা দিতে হবে বলে দিন কয়েক আগেই পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এ দিন স্কুল বসবে সকালে। বৃহস্পতিবার তাই বেশ কিছু স্কুল খুলেছিল সকাল ৭টায়। তবে তা নিছক নিয়মরক্ষার। কারণ, বেলা সওয়া আটটার মধ্যেই স্কুল বন্ধ করে শিক্ষকেরা পা বাড়িয়েছিলেন সম্মেলনের পথে। কিছু স্কুলে পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল খেয়েই ফিরে গিয়েছিল বাড়ি। ব্লকের অধিকাংশ স্কুল অবশ্য খলোইনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, যে সব স্কুলের শিক্ষকেরা বাইরে থেকে আসেন, সেগুলি আর সাত সকালে খোলার ঝুঁকি নেয়নি।

ব্যাপারটি যে ঠিক হয়নি তা মেনে নিচ্ছেন বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী। বলছেন, ‘‘বিষয়টা নজরে এসেছে। যে সব স্কুল একেবারেই হয়নি, সেখানকার শিক্ষকেরা আগে থেকে ছুটি নিয়েছিলেন কি না দেখা হচ্ছে। সকালে স্কুলই বা কার নির্দেশে করা হল, তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখছি’’

এ ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। কিছু দিন আগে বীরভূমের ইলামবাজার ব্লকে একই কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল সব প্রাথমিক স্কুলে। প্রায় একই ঘটনার সাক্ষী ছিল জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জও।

এ দিনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামের অভিভাবকেরাও। মাথরুন গ্রামের আবু খালেক, শঙ্কর রাজোয়াররা এক যোগে বলছেন, ‘‘এ কীরম নিয়ম বলুন তো, রাজনৈতিক সম্মেলনের জন্য স্কুলের সময় পাল্টানো, কেউ কখনও শুনেছে!’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, প্রতি স্কুল থেকে দু-এক জন করে শিক্ষক যাবেন বাকিরা স্কুল চালু রাখবেন। কিন্তু তৃণমূলের শিক্ষক নেতারা তা মানতে চাননি।’’

সম্মেলনের আহ্বায়ক আবু বক্করের অবশ্য যুক্তি, ‘‘গোপালবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়াই ছিল আমাদের লক্ষ্য। গোপালবাবু অন্য কোনও দিন সময় দিতে পারছিলেন না বলে এ দিনই তাই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।’’ ওই অনুষ্ঠানে সব শিক্ষকের উপস্থিতিটা তাই ‘জরুরি’ ছিল বলেই মনে করছেন সংগঠনের উদ্যোক্তারা। স্কুল বন্ধ রাখার কথা অবশ্য মানতে চাননি সংগঠনের মঙ্গলকোট-৩ চক্রের সম্পাদক বিকাশ সরকার। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশে সকালে স্কুল বসেছে সর্বত্রই।’’

সম্মেলন ও সংবর্ধনা সভায় হাজির ছিলেন ওই চক্রের সদ্য নিযুক্ত স্কুল পরিদর্শক শ্যামল ঘোষও। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘গোপালবাবুর বিদায় সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু স্কুল বন্ধ রাখা বা সকালে স্কুল করার নির্দেশ আমি দিইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE