Advertisement
২৬ মে ২০২৪

জঙ্গির হাতে ছ’টা আধার

বাকি তিনটি কার্ডে যাদের ছবি রয়েছে, তারা সামশাদদের সঙ্গী বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা। যদিও এ ক্ষেত্রেও নাম-ধাম ভাঁড়ানো বলেই তাঁরা মনে করছেন।

ভারতের আধার কার্ড। প্রতীকী ছবি।

ভারতের আধার কার্ড। প্রতীকী ছবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

কলকাতায় ধৃত আল কায়দার শাখা সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) দুই জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬টি আধার কার্ড!

এর মধ্যে তিনটি কার্ডে ওই দুই জঙ্গি সামশাদ মিয়াঁ এবং রিয়াজুল ইসলামের ছবি। কিন্তু নাম-ধাম সবই আলাদা। বাকি তিনটি কার্ডে যাদের ছবি রয়েছে, তারা সামশাদদের সঙ্গী বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা। যদিও এ ক্ষেত্রেও নাম-ধাম ভাঁড়ানো বলেই তাঁরা মনে করছেন।

স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) এক কর্তা বলেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে আধার কার্ডগুলি নকল নয়। অন্যের পরিচয়পত্র জাল করে তাদের নামে কার্ডগুলি বানানো হয়েছে। কিন্তু বায়োমেট্রিক তথ্যগুলি ওই জঙ্গিদের। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেউ যদি অন্যের নামে আধার কার্ড তৈরি করে নিতে পারে, তা হলে এই কার্ড ঘিরে সরকারি ঢাকঢোলের কোনও মূল্য থাকে কি? নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি খুবই চিন্তার। জঙ্গিরা ভিন্ন নামে আধার কার্ড বানিয়ে ফেললে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে প্যান কার্ড, পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। আধারের সূত্র ধরে তাদের ধরারও কোনও উপায় থাকবে না।’’

এসটিএফ সূত্রে বলা হচ্ছে, সামশাদের কাছ থেকে একই নাম ও নম্বরের দু’টি ল্যামিনেট করা আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। তুষার বিশ্বাসের নামে তৈরি আধার কার্ডের নম্বর ৫৮২৯৪৪১০৭২৪১। কিন্তু তাতে ছবি রয়েছে সামশাদের। জেরায় সে জানিয়েছে, কর্নাটকের বেলগাঁওয়ে থাকার সময় সে ওই কার্ড বানিয়েছিল। কিন্তু আধার কার্ড তৈরির সময়ে অন্য সচিত্র পরিচয়পত্র দেখানোর কথা। সেই পরিচয়পত্র কী ভাবে জোগাড় করেছিল সামশাদ, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

একই ভাবে রিয়াজুলের কাছ থেকে তার ছবি-সহ যে আধার কার্ডটি পাওয়া গিয়েছে (নম্বর ২১০১৮৪২৮৫২৭৫), তাতে নাম রয়েছে নাম রয়েছে আবুল ফজলের। ঠিকানা, পশ্চিমপাড়া, পলাসন, বর্ধমান। রিয়াজুলের কাছ থেকে মিলেছে আরও তিনটি আধার কার্ড। সে গুলির তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

জেরায় দুই জঙ্গি জানিয়েছে, তারা ভিন্ নামে ‘আসল’ আধার কার্ড তৈরির পাশাপাশি নিজেদের ছবি দিয়ে বিভিন্ন নামে আরও কয়েকটি নকল আধার কার্ড তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। যাতে রাজ্যে রাজ্যে ঘোরার সময় এক এক বার এক এক রকম আধার কার্ড দেখিয়ে হোটেলে থাকা যায়। হোটেলে থাকা বা ট্রেন-বিমানের টিকিট কেনার সময় আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করা হয় না। ফলে আসল-নকল যাচাই করার সুযোগ নেই।

নকল কার্ড তৈরির ব্যাপারে দেওবন্দের এক মওলানা তাদের সাহায্য করছিলেন বলে সামশাদরা জানিয়েছে। ওই মওলানা এসটিএফের হাতে মাস কয়েক আগে ধরাও পড়েছে। তবে এবিটি জঙ্গিদের পিছনে আরও কয়েক জন ছিল বলে এসটিএফ জেনেছে। পাশাপাশি, অন্য যে তিনটি আধার কার্ড সামশাদদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে, তারা এবিটি-র মডিউলের অধরা সদস্য কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া, বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ওই দুই জঙ্গি যখন এ দেশে ঢোকে, তখন তাদের সঙ্গে স্বপন নামে আরও এক চাঁই ছিল। তার খোঁজ এখনও পায়নি পুলিশ। মডিউলের আরও চার-পাঁচ জন এ রাজ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছে এসটিএফ।

তবে সব ছাপিয়ে যে প্রশ্ন সামনে আসছে তা হল, যদি এক জনের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি তুলে অন্যের নামে আধার কার্ড বানানো যায়, তা হলে কীসের সুরক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE