Advertisement
E-Paper

বিয়ে থেকে নিস্তার পেল সাত নাবালিকা

বাল্যবিবাহের থেকে উদ্ধার পেল দুই জেলার সাত নাবালিকা। তাদের মধ্যে তিন জন বাঁকুড়ার। চার জন পুরুলিয়ার। শনি এবং রবিবার দুই জেলার চাইল্ড লাইন এবং প্রশাসনের তৎপরতায় বিয়ে বন্ধ হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০২:২৫

বাল্যবিবাহের থেকে উদ্ধার পেল দুই জেলার সাত নাবালিকা। তাদের মধ্যে তিন জন বাঁকুড়ার। চার জন পুরুলিয়ার। শনি এবং রবিবার দুই জেলার চাইল্ড লাইন এবং প্রশাসনের তৎপরতায় বিয়ে বন্ধ হয়।

বাঁকুড়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল জানান, ওন্দা ব্লকের পেঁচাড়া গ্রামে বছর ষোলোর এক আদিবাসী কিশোরীর সঙ্গে ওই এলাকারই এক যুবকের বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল। রবিবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই জেলা চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি দল এবং ওন্দা থানার পুলিশ গ্রামে যায়। মেয়েটির পরিবার এবং পড়শিরা প্রথমে বাধা দিলেও বোঝানোর পরে বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন।

একই ভাবে রবিবার রানিবাঁধ ব্লকের খেজুরিয়া গ্রামে দশম শ্রেণির এক নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে বেলপাহাড়ি থানা এলাকার এক যুবকের বিয়ে রুখে দেয় চাইল্ড লাইন। ওন্দা থানার হতড়া গ্রামের বছর পনেরোর এক কিশোরীর বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বাঁকুড়া ২ ব্লকের শঙ্করহাটি গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে। এ দিন দুপুরে বিডিও (বাঁকুড়া ২) অমরেশচন্দ্র দাস এবং চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা গিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন।

জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর জানান, ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে ওই কিশোরীদের অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়েছেন। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালিকা অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আইনি জটিলতা আগেই জানতেন ওই কিশোরীদের অভিভাবকেরা। কিন্তু তাঁদের দাবি, “গ্রামে ওই বয়সে আগেও অনেকের বিয়ে হয়েছে। আমাদের পারিবারিক অবস্থা খারাপ। তাই মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম।”

পুরুলিয়ার ছবিটাও প্রায় একই রকমের। শনিবার বাঘমুণ্ডির চারটি গ্রামে চার নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে চাইল্ড লাইন এবং প্রশাসন। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদলা গ্রামের দু’টি পরিবার তাঁদের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল স্থানীয় অযোধ্যা মোড় ও সুইসা গ্রামে। তাদের এক জন দশম শ্রেণির ছাত্রী। অন্য জন এই বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল আগামী ১০ এবং ৩০ মে।

অন্য দিকে বাড়েরিয়া ও হরিডি গ্রামের দু’টি পরিবার মেয়েদের বিয়ে ঠিক করেছিল ঝাড়খণ্ডে। আগামী ১২ এবং ১৯ মে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ওই কিশোরীদেরও এক জন দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং এক জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ওই চার জনের মধ্যে কারও বয়সই ১৮ ছোঁয়নি।

জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার জানান, শনিবার ওই চার নাবালিকার অভিভাবকদের সঙ্গেই কথা বলে বিয়ে আটকানো হয়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েরা কী কী অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে তা বুঝিয়ে বলার পরে অভিভাবকেরা বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন। তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে দেবেন না।

জেলা জুড়ে জোর কদমে প্রচার চালানোর পরেও অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার হিড়িক যে আদৌ কমছে না, তা নিয়ে চিন্তিত চাইল্ড লাইন এবং প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম নথিভুক্তির পরেও অভিভাবকেরা লুকিয়ে চুরিয়ে মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এলে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু শুধু প্রশাসনের নজরদারিতে নাবালিকা বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। বাবা মায়েরা নিজেরাই যদি মেয়ের ভাল না বোঝেন তাহলে খুবই মুশকিল।’’

সজলবাবু অবশ্য দাবি করেন, প্রচারের ফলে জেলার বাসিন্দারা ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠছেন। ফলে নাবালিকা বিয়ের তোড়জোর শুরু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগে ভাগে তাঁদের কাছে সেই খবর পৌঁছে যাচ্ছে।

Child marriage minors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy