Advertisement
E-Paper

বাড়িতেই ফ্রিজারে রইল করোনা আক্রান্তের দেহ

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপ ফ্রিজার জোগাড় করে ফ্ল্যাটে দেহ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে মঙ্গলবার সকাল হয়ে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৩:২৬
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার সেই আবাসন।—নিজস্ব চিত্র।

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার সেই আবাসন।—নিজস্ব চিত্র।

সোমবার থেকে দু’দিন কোভিড আক্রান্ত বাবার দেহ ফ্ল্যাটে রাখতে বাধ্য হলেন ছেলে।

বাড়িতে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হলে তাঁর সৎকার নিয়ে পরিজন কী বিপাকে পড়তে পারেন, তা দেখিয়ে দিল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার একটি আবাসনের এই ঘটনা।

পরিবার সূত্রের খবর, জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন একাত্তর বছরের ওই বৃদ্ধ। সোমবার দুপুরে মারওয়াড়ি হাসপাতালের কাছে এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে বৃদ্ধকে দেখানো হয়। তিনি করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিলে একটি বেসরকারি ল্যাবের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ি ফিরে অসুস্থতা বাড়লে তাঁকে নার্সিংহোম বা হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রস্তুতির মধ্যেই বিকেল ৩টে নাগাদ মৃত্যু হয় বৃদ্ধের।

বৃদ্ধের ভাইপোর দাবি, স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাত ৮টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিটের বেসরকারি মর্গে প্রথমে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু করোনা সন্দেহভাজনের দেহ ওই মর্গ নিতে না চাইলে ফোনে ভবানীপুর এবং রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডে অবস্থিত দু’টি মর্গ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিজন। কিন্তু সেখানেও দেহ রাখার সম্মতি মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে রাত প্রায় ১টা নাগাদ ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি নিয়ে ফ্ল্যাটে বাবার দেহ রাখার ব্যবস্থা করেন মৃতের ছেলেরা। এই পুরো ঘটনাক্রম সম্পর্কে পুলিশ অবহিত ছিল বলে দাবি মৃতের ভাইপোর। যদিও স্থানীয় থানার এক শীর্ষ আধিকারিকের পাল্টা বক্তব্য, মৃতের পরিবার যে অসত্য বলছে, তা প্রমাণ করে দিতে পারেন তিনি।

আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে জয়ী ৯৯-এর ‘যুবক’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপ ফ্রিজার জোগাড় করে ফ্ল্যাটে দেহ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে মঙ্গলবার সকাল হয়ে যায়। কোভিড কি নন-কোভিড, সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেসরকারি ল্যাবেই বসেছিলেন পরিজন। রিপোর্ট হাতে পেয়ে পরিজন দেখেন, বৃদ্ধ কোভিড পজ়িটিভ ছিলেন! তবে দেহ সৎকারের প্রক্রিয়া শুরু হতে পর দিন হয়ে যায়। বুধবার সকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ার পর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতা পুরসভা গাড়ি পাঠিয়ে দেহ নেওয়ার ব্যবস্থা করে।

পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, এ দিন সকাল ১১টার আগে তাঁরা ঘটনার খবর পাননি। তার পর ব্যবস্থা করতে যে টুকু সময় লেগেছে। তবে তা জানলেও স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি ছাড়া তাঁদের কিছু করণীয় নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: আমপান-তালিকায় থ প্রশাসন, ৯০ শতাংশই ভুয়ো আবেদন

স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কোনও রকম অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। আগামীদিনে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সঠিক তথ্য না পেয়ে ওই পরিবারের হয়রানির ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্য দফতরের হেল্পলাইনে নম্বরে ফোন করলে, কী করতে হবে মৃতের পরিজন জেনে যেতেন। পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তা থানাগুলিকে অবহিত করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে।

ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যসোসিয়েশনের তরফে রাজ গুপ্তের দাবি, ‘‘দেহ যাতে মর্গে সংরক্ষিত করা যায় তার জন্য দু’দিন ধরে একাধিক জায়গায় ফোন করা হয়েছে। পুরসভা, পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’ মৃতদেহের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কী হবে, কাদের পরীক্ষা করানো প্রয়োজন— এ সব বিষয়ে কোনও বার্তাই আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। অ্যাপার্টমেন্টের আর এক বাসিন্দা পুরণজিৎ শীল বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষ এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন, তার কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকবে না!’’ মৃতের আত্মীয় অক্ষয় মল্লিক বলেন, ‘‘দেহ সংরক্ষণ করার আর্থিক ক্ষমতা আমাদের ছিল। অনেকের সেই ক্ষমতা না-ও থাকতে পারে। তাঁদের কী হবে?’’

এ দিকে বাড়ির মধ্যে দেহ এ ভাবে সংরক্ষিত করা যায় কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক সোমনাথ দাস জানান, বিষয়টি বেআইনি। তাঁর কথায়, ‘‘দেহ সেখানেই সংরক্ষণ করা উচিত, যাদের এ কাজ করার অনুমতি আছে।’’

পরিবারের বক্তব্য, পরিস্থিতির চাপে পড়ে তাঁরা বাড়িতে দেহ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। সোমনাথবাবু জানান, এ ক্ষেত্রে সাধারণত দু’ধরনের পদক্ষেপ করা যায়। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখে দিলে তার ভিত্তিতে দেহ সংরক্ষণে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা না হলে সরকারি হাসপাতালে দেহ নিয়ে গেলে ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হলে মৃতদেহ মর্গে রাখার সুযোগ ছিল। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ পারিবারিক চিকিৎসক দেননি? এ বিষয়ে সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি পরিবার।

Coronavirus in Kolkata Coronavirus Freezer Amherst Street
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy