Advertisement
২২ মে ২০২৪

ডাক্তারের ভেক ধরে শিশুপাচার

নিজেকে চিকিৎসক বলে জাহির করতেন তিনি। ডাক্তারি পেশার নিয়ম মেনে ‘রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট’ সঙ্গে রাখতেন সর্বদাই। পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে তাঁর ভাল পসারও ছিল।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

নিজেকে চিকিৎসক বলে জাহির করতেন তিনি। ডাক্তারি পেশার নিয়ম মেনে ‘রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট’ সঙ্গে রাখতেন সর্বদাই। পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে তাঁর ভাল পসারও ছিল।

কিন্তু ভবানীপুরের এক তরুণী অপহরণের মামলার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ নাগালে পেয়ে গেল কাঁথির সেই স্বঘোষিত ডাক্তারকে। ধরা পড়ে গেল, তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা মোটেই তাঁর নয়। অন্য এক চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর হাতিয়ে এত দিন বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘চিকিৎসা’ করে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।

তরুণী অপহরণের সঙ্গে ওই ভুয়ো চিকিৎসক জড়িয়ে গেলেন কী ভাবে?

লালবাজারের খবর, গত বছরের এপ্রিলে এক কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ পায় ভবানীপুর থানা। তার তদন্ত শুরু করে জানুয়ারিতে কাঁথি এলাকায় শিশু পাচারের একটি চক্রের সন্ধান পান গোয়েন্দারা। সেই চক্রের মাথা হিসেবে সুমন হালদার নামে এক শিশু চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়। আদতে কলকাতার গরফার বাসিন্দা সুমন কাঁথিতে একটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত।

তদন্তকারীরা জানান, জেরার মুখে ওই ব্যক্তি এমন সব কথা বলছিলেন, যা থেকে সন্দেহ হয়, তিনি আদৌ চিকিৎসক কি না। তাঁর ব্যাপারে জানতে মেডিক্যাল কাউন্সিলের দ্বারস্থ হন গোয়েন্দারা। মেডিক্যাল কাউন্সিল জানায়, সুমনের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি আসলে কলকাতার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা এক হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের। ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি নিয়ে বহাল তবিয়েতে কাঁথিতে ব্যবসা ফেঁদেছিলেন সুমন। শিশু চিকিৎসক হিসেবে নিজের পরিচয় প্রচার করে হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শিশু পাচার চক্রের মাথা,’’ বলেন এক গোয়েন্দা।

পুলিশ জানাচ্ছে, শিশু পাচার, তরুণী অপহরণে সুবিধে হবে বলেই ওই ব্যক্তি শিশু চিকিৎসকের ভেক ধরেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সুমনের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে কলকাতা পুলিশ। সুমনের সঙ্গে আরও পাঁচ জনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১টি ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইনও। অভিযুক্তের তালিকায় পাচার হওয়া একটি শিশুর বাবা পদ্মলোচন বেরাও রয়েছেন। সুমন-সহ অভিযুক্ত ছ’জনই এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন।

চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মলোচন তার সদ্যোজাত সন্তানকে প্রথমে ৭৫ হাজার টাকায় সুমনের কাছে বেচে দিয়েছিলেন।

এর মধ্যেই শিশু পাচার নিয়ে রাজ্য জুড়ে ধরপাকড় শুরু হয়। বেগতিক দেখে ক্ষতি হচ্ছে বুঝেও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় নামে বরাহনগরের এক বাসিন্দার কাছে ৪৭ হাজার টাকায় সেই শিশুকে ফের বিক্রি করে দেন সুমন। পদ্মলোচন ছিলেন ভবানীপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার। এক ব্যক্তি গত বছরের এপ্রিলে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ করেন, পদ্মলোচন তাঁর কিশোরী মেয়েকে ফুসলে নিয়ে গিয়েছে। তদন্তে নেমে লালবাজার গত ৮ জানুয়ারি মেয়েটিকে বাঁশদ্রোণী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

সেখানেই ধরা পড়েন পদ্মলোচন। তাঁকে জেরা করে নারী অপহরণ চক্রের পাশাপাশি খোঁজ মেলে শিশু পাচার চক্রেরও। তদন্তের জালে জড়িয়ে পড়েন সুমন। বেরিয়ে পড়ে তাঁর আসল পরিচয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Trafficking Fraud Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE