ধৃত: পুলিশের জালে ভুয়ো সাক্ষী। সোমবার নিজস্ব চিত্র।
গোড়াতেই হোঁচট!
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে সহবাস, পরে বিয়েতে বেঁকে বসার মামলা চলছে মেদিনীপুর আদালতে। সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় উঠেছে নির্যাতিতার ‘বাবা’। বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার নাম?’ সাক্ষী চুপ। সুর চড়িয়ে বিচারকের প্রশ্ন, ‘কী ব্যাপার, নামটাও বলতে পারছেন না?’ ধমক খেয়ে আমতা আমতা করে জবাব এল, ‘আজ্ঞে, আমার নাম সাধন গায়েন।’
অথচ বিচারকের হাতের নথিতে নির্যাতিতার বাবার নাম অন্য লেখা রয়েছে! সোমবার শুনানির শুরুতেই তাই সন্দেহ হয় মেদিনীপুরের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক নবনীতা রায়ের। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করতেই ভেঙে পড়ে ওই সাক্ষী। বলে, ‘মাফ করবেন। আমি আসলে নির্যাতিতার বাবা নই। আমাকে বাবা সাজিয়ে আনা হয়েছে।’
এর পর বিচারকের নির্দেশে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সাক্ষ্য দিতে আসার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সুজিত ভুঁইয়া নামে ওই ব্যক্তিকে। গ্রেফতার করা হয়েছে মেয়েটির মা-কেও। অভিযোগ, তিনিই পড়শি সুজিতকে স্বামী সাজিয়ে সাক্ষ্য দিতে এনেছিলেন। মামলার সরকারি আইনজীবী শ্যামাপদ দাস মানছেন, “সুজিত নাবালিকার বাবা নয়। অথচ, বাবা সেজে সাক্ষ্য দিতে এসেছিল।” মেদিনীপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী (পিপি) রাজকুমার দাস বলছিলেন, “মেয়ের বাবা সেজে অন্য লোক সাক্ষী দিচ্ছে, এমন ঘটনা আগে মেদিনীপুরে ঘটেনি।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর চন্দ্রকোনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বছর সতেরোর ওই নাবালিকা। অভিযোগ ছিল, রঘুনাথপুরের যুবক শেখ বাবলু বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার সহবাস করেছে। সে অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়ে। পরে গর্ভপাত করানো হয়। প্রথমবার গর্ভপাতের পরে ফের বিয়ের কথা বলে বাবলু ওই নাবালিকার সঙ্গে সহবাস করে বলে অভিযোগ এবং দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়েটি। দ্বিতীয়বারও তার গর্ভপাত করানো হয়। পকসো আইনে মামলা রুজু হয়। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ধারাই দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শেখ বাবলুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এখন সে জামিনে মুক্ত। নির্যাতিতা ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছে। এ দিন তার বাবা-মায়ের সাক্ষ্যদানের দিন ছিল।
কিন্তু কেন সুজিতকে বাবা সাজিয়ে সাক্ষ্য দিতে আনার প্রয়োজন পড়ল? আইনজীবীরা মনে করছেন, মেয়েটির মায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের বোঝাপড়া হয়ে থাকতে পারে। হয়তো এই ব্যক্তি বাবা হিসেবে এমন কিছু বলত, যাতে মামলা লঘু হয়ে যেত।
তা অবশ্য হয়নি। আপাতত শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে ভুয়ো বাবা ও নির্যাতিতার মায়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy