Advertisement
E-Paper

ছোট্ট বান্টি-র টানেই তার কঙ্কালের কাছে ফিরে আসেন বাবা

কেন এ ভাবে ছেলের দেহাবশেষের কাছে বার বার ফিরে আসছেন মণিময়বাবু?

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৬
শৌভিক সামন্ত।

শৌভিক সামন্ত।

তিনি ফিরে ফিরে আসেন নীলরতন সরকার হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে।

সেখানে কাচের শো-কেসে তাঁর বান্টি-র ছোট্ট কঙ্কাল। তার সামনে ধূপ জ্বেলে, মিষ্টি রেখে আবার ফিরে যান আসানসোলের বাড়িতে। একমাত্র সন্তান, ৫ বছরের শৌভিক লিউকিমিয়ায় চলে যাওয়ার পর ২০ বছর ধরে এটাই মণিময় সামন্তের রুটিন। ছেলেকে এ ভাবে কখনওই দেখতে চাননি মণিময়বাবুর স্ত্রী শুভ্রাদেবী। তিনি কোনওদিন হাসপাতালে আসেননি। বছর আড়াই আগে তাঁর মৃত্যু হয়। মণিময়বাবু এখন একা। শৌভিকের জন্মদিন ১৬ সেপ্টেম্বর। মৃত্যুদিন ২৯ অক্টোবর। কখনও বছরে এই দু’টো দিন, বা অন্য কোনও দিন আসানসোল থেকে চলে আসেন মণিময়বাবু। সঙ্গে বন্ধু বা আত্মীয়। বলেন, ‘ওর যে ছবি ওখানে রাখা আছে, সেখানে অবশ্য মালা দিতে পারি না। হাত কেঁপে যায়। সেটা আমার বন্ধু বা আত্মীয় দিয়ে দেন।’’

যাঁরা দেহ দান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আত্মীয়দের আর ফিরে দেখার সুযোগ থাকে না। দেহ দানের অন্যতম শর্তই তাই। মণিময়বাবুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? চিকিৎসকদের মতে, পাঁচ বছর বয়সি বাচ্চার দেহদানের উদাহরণ বিরল। এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক আশিস ঘোষাল বলেন, ‘‘দান করা দেহ প্রধানত শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। একবার দান করার পরে তাই সেই দেহের উপরে আত্মীয়দের দাবি থাকে না। মণিময়বাবুর উদাহরণ দেখে অন্যরাও যদি একই দাবি করেন, সেটা মানা সম্ভব নয়। বিশেষ ঘটনা হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হয়েছিল।’’

দেহ দান নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘গণদর্পঁণ’-এর প্রধান ব্রজ রায়ও জানান, শিক্ষার স্বার্থেই দান করা দেহ কাটাছেঁড়া করা হয়। ওই অবস্থায় আত্মীয়দের তা দেখতে দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা মানসিক পীড়ার সামিল। উদাহরণ দিয়ে ব্রজবাবু বলেন, ‘‘এক শিল্পীর মৃত্যুর পরে তাঁর কঙ্কাল নীলরতন হাসপাতালে রাখা ছিল। সেই শিল্পীর এক ভক্ত তা দেখতে চান। কিন্তু, তাকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’

কেন এ ভাবে ছেলের দেহাবশেষের কাছে বার বার ফিরে আসছেন মণিময়বাবু? মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের জবাব, ‘‘এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা প্রিয়জনের জন্ম-মৃত্যুদিনে ছবিতে ফুলের মালা দিয়ে স্মরণ করি। কেউ কবরস্থানে ফুল দিয়ে আসেন। মণিময়বাবুও ছেলেকে স্মরণ করছেন।’’ ২০ বছর আগে শিশুপুত্রের দেহ দান করে দেওয়ার মানসিকতাকেও কুর্নিশ করেছেন জয়রঞ্জন। ১৯৯৮ সালের ২৯ অক্টোবর শৌভিকের চোখ দু’টোও দান করে দিয়েছিলেন মণিময়বাবু।

তবে পুত্রের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে দৃষ্টিহীনদের স্কুলে বা দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিস্কুট-লজেন্সও দেন মণিময়বাবু। আসানসোল শহরে চক্ষু দান, দেহ দান, রক্ত দান কর্মসূচির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখা পিতার কথায়, ‘‘ওই সব ছোট শিশুদের মধ্যেই বেঁচে থাকে শৌভিক।’’

Death Body donation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy