Advertisement
০৪ মে ২০২৪

শ্বশুরকে অপহরণ করে ৬০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি, ধৃত জামাই

পুলিশ সূত্রের খবর, সাত বছর আগে রান্নার মশলার ব্যবসায়ী প্রদীপবাবুর সঙ্গে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা তপন দাসের বড় মেয়ে ছন্দবাণীর বিয়ে হয়। দম্পতির একটি ছ’বছরের মেয়েও রয়েছে।

তপন দাস এবং প্রদীপ ঘোষ (ডান দিকে)।

তপন দাস এবং প্রদীপ ঘোষ (ডান দিকে)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০২
Share: Save:

প্রথমে নিজের অপহরণের গল্প ফেঁদে টাকা আদায়ের চেষ্টা। পরে শ্বশুরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। ধৃতের নাম প্রদীপ ঘোষ। তিনি দুর্গাপুরের বেনাচিতি গোঁসাইপাড়ার বাসিন্দা। বুধবার বালি থানায় প্রদীপবাবুর স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সাত বছর আগে রান্নার মশলার ব্যবসায়ী প্রদীপবাবুর সঙ্গে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা তপন দাসের বড় মেয়ে ছন্দবাণীর বিয়ে হয়। দম্পতির একটি ছ’বছরের মেয়েও রয়েছে। ছন্দবাণীর দাবি, কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে প্রদীপ চার বছর আগে চাকরি দেওয়ার একটি সংস্থা খুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দুর্গাপুর, মুর্শিদাবাদ, কলকাতার অনেক ছেলেমেয়ের থেকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে তারা প্রতারণা করে। এ ভাবে এক কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।’’ ছন্দবাণী জানান, গত ২৭ নভেম্বর থেকে প্রদীপ আচমকা গায়েব হয়ে যান। তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে প্রদীপের একটি ফোনও আসে ছন্দবাণীর কাছে। প্রদীপের মুক্তির দাবিতে ৬০ লক্ষ টাকা চেয়ে অপরিচিতদের ফোনও আসত তাঁর কাছে। প্রসঙ্গত, তপনবাবু ছন্দবাণীকে দু’টি বাড়ি দিয়েছেন। যার দাম প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।

এ দিন বালি থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছন্দবাণী বলেন, ‘‘প্রদীপ ফোনে বলত, ওই সম্পত্তির দলিল অপহরণকারীদের না দিলে ওরা তার হাত-পা কেটে ফেলবে বা খুন করে ফেলবে।’’ তবুও তপনবাবু জমির দলিল দিতে রাজি হননি। ওই গৃহবধূ জানান, দিন সাতেক আগে প্রদীপ তাঁকে ফোন করেন। প্রদীপের দাবি ছিল, অপহরণকারীদের হাত থেকে কোনও রকমে পালিয়ে বালি রাসবাড়ি এলাকার দিদির বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন তিনি। অপহরণকারীরা তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন। মেয়ে পারমিতাকে নিয়ে ছন্দবাণী যেন তাঁর কাছে চলে আসেন।

প্রদীপের পীড়াপীড়িতে গত শনিবার বাবা ও মেয়ের সঙ্গে বালিতে আসেন ওই যুবতী। কারণ ননদের বাড়ি তিনি চিনতেন না। তাই জামাইয়ের থেকে ঠিকানা জেনে তপনবাবু মেয়ে ও নাতনিকে পৌঁছে দিতে এসেছিলেন। ছন্দবাণী বাড়ি ঢুকে দেখেন, প্রদীপের পায়ে সামান্য চোট রয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ দুর্গাপুর ফিরে যাওয়ার জন্য একাই বেরিয়ে পড়েন তপনবাবু। এর কিছু ক্ষণ পর থেকেই প্রৌঢ়ের মোবাইল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে।

ছন্দবাণীর অভিযোগ, ওই দিন বিকেলে অচেনা নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। বলা হয়, ৬০ লক্ষ টাকা না দিলে খুন করা হবে তপনবাবুকে। বার কয়েক

তপনবাবুর সঙ্গেও ছন্দবাণীর কথাও বলিয়ে দেন অপহরণকারীরা। প্রতিদিনই অন্তত এক-দু’বার করে ফোনে ওই যুবতীকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ছন্দবাণী বলেন, ‘‘বাবাকে ওরা মারধর করেছিল খুব। বাবা কান্নাকাটি করছিলেন। প্রথমে বর্ধমানে নিয়ে গিয়েছে বলে জেনেছিলাম। এখন কোথায় বলতে পারব না।’’ অপহরণকারীদের সঙ্গে কথোপকথন চলার মাঝে এক জনের নাম করিম শেখ বলে শুনেছিলেন ছন্দবাণী। যিনি প্রদীপের বন্ধু বলেই জানেন ওই গৃহবধূ। ছন্দবাণী বলেন, ‘‘প্রদীপ বলত, বাবাকে বাঁচাতে সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও টাকা দিতেই হবে। সে সব কথা শুনে মনে হত বাবাকে প্রদীপই অপহরণ করিয়েছে।’’

অভিযোগ, ননদের বাড়িতে কার্যত বন্দি ছন্দবাণীকে বাপের বাড়িতেও ফোন করতে দেওয়া হত না। এ দিকে, তপনবাবু ও ছন্দবাণীর খবর না পেয়ে তাঁদের

পরিজনেরা মঙ্গলবার দুর্গাপুর এলাকার এক কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানান। তিনি ওই দিনই ফোনে বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াকে গোটা বিষয়টি জানান। বৈশালী বলেন, ‘‘ওঁরা ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। শুধু ছন্দবাণীর ননদের পদবি ও বালির একটা আবাসনের নাম বলেছিলেন।’’ বিধায়কের নির্দেশে বিজয়লক্ষ্মী রাও, সুমিত ডালমিয়া-সহ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা রাতেই রাসবাড়ি এলাকার ওই আবাসনটি খুঁজে বার করেন। বিজয়লক্ষ্মী জানান, প্রথমে ছন্দবাণীর উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেন প্রদীপ। কিন্তু সব ঘর খুলে দেখাতে বলতেই একটি বন্ধ ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয় ছন্দবাণীকে।

তত ক্ষণে বিষয়টি হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী ও আইজি বিশাল গর্গকে জানান বৈশালী। রাতেই খবর পেয়ে বালি থানার পুলিশ গিয়ে আটক

করে প্রদীপকে। পরে গ্রেফতার করা হয়। অন্য দিকে, পুলিশকর্তাদের মধ্যস্থতায় ছন্দবাণীর কাছে আসা অপহরণকারীদের ফোনের টাওয়ারের অবস্থান দেখে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, তপনবাবুকে অপহরণ করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বালি থানার তরফে দুর্গাপুর থানা ও মুর্শিদাবাদ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রদীপকে সঙ্গে নিয়ে বালি পুলিশের দল বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Arrest Kidnapping Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE