Advertisement
E-Paper

কান্নায় বানচাল বিক্রির ছক, বর্ধমানে জালে তিন

নিশুত রাতের সুনসান পাড়ায় হঠাৎই ভেসে এল সদ্যোজাতের কান্না। সেই কান্নাই ফাঁস করল বর্ধমান শহরে শিশু বিক্রির ছক। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার মতো বড় মাপের চক্র না হলেও শহরের এক এলাকার মধ্যেই শিশু বিক্রির চেষ্টার এমন ঘটনার কথা জেনে অবাক হয়েছেন বর্ধমানের মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
ধৃত দুই আয়া। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত দুই আয়া। — নিজস্ব চিত্র

নিশুত রাতের সুনসান পাড়ায় হঠাৎই ভেসে এল সদ্যোজাতের কান্না। সেই কান্নাই ফাঁস করল বর্ধমান শহরে শিশু বিক্রির ছক।

উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার মতো বড় মাপের চক্র না হলেও শহরের এক এলাকার মধ্যেই শিশু বিক্রির চেষ্টার এমন ঘটনার কথা জেনে অবাক হয়েছেন বর্ধমানের মানুষ। বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম থেকে বিস্কুটের পেটিতে শিশু পাচার এবং তার সূত্র ধরের পরের পর রোমহর্ষক তথ্য সামনে আসার পর থেকেই বিভিন্ন ভুইফোঁড় নার্সিংহোম, পাড়ার ক্লিনিকের নাম উঠে আসছে তদন্তে। ওই ঘটনায় সরাসরি জড়িত না হলেও এ বার বর্ধমানেরও নাম জুড়ে গেল শিশু পাচারে। সেই অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শহরের মহাজনটুলি এলাকার এক নার্সিংহোমের মালিক সাধন ঘটক এবং দুই আয়া সন্ধ্যা মিত্র ও রৌশনারা বেগমকে।

পুলিশের দাবি, ওই দুই আয়া রবিবার রাতে এক সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন বাহির সর্বমঙ্গলা এলাকার পশ্চিমপাড়ায় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, পুরো ঘটনা সিআইডি-কে জানানো হয়েছে। সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে সিজেএম সঞ্জয়রঞ্জন পাল পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ওই নার্সিংহোমটিকে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। পাহারায় বসানো হয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের। নার্সিংহোমটি বৈধ লাইসেন্স নিয়ে চলছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর আগেও ওই নার্সিংহোম থেকে শিশু বিক্রি হয়েছে কিনা, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নিঃসন্তান দম্পতির বাড়ি থেকে অত রাতে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে কৌতুহলী হয়েই উঁকিঝুঁকি মারেন পড়শিরা। দরজায় কান পেতে এক মহিলার সঙ্গে ওই দম্পতির কথাবার্তা শুনতে পান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সদ্যোজাত শিশুটিকে নেওয়ার জন্য দম্পতিকে চাপ দিচ্ছিল ওই মহিলা কণ্ঠ। শিশুটির দাম বাবদ দশ হাজার টাকাও চাওয়া হয়। পরে অবশ্য দর নেমে আসে সাড়ে চার হাজার টাকায়। কিন্তু ওই দম্পতি রাজি হচ্ছিলেন না।

এ দিন ওই দম্পতির কিছু প্রতিবেশী বলেন, ‘‘বাইরে থেকে কথাবার্তা শুনেই বুঝতে পারছিলাম, ওই মহিলা শিশুটিকে বিক্রি করতে এসেছেন। বাদুড়িয়ার ঘটনা আমাদের সবারই জানা। তার উপর রবিবারই মেমারি থেকে ওই ঘটনায় যুক্ত এক হাতুড়েকে সিআই়ডি ধরেছে। তাই, ওই দম্পতির বাড়িতে ঢুকে যাই আমরা। গিয়ে দেখি, যিনি বিক্রি করতে এসেছেন সেই রৌশনারা বেগমও আমাদের পাড়াতেই ভাড়া থাকেন!’’ এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা মারধর করে আটকে রাখেন রৌশনারাকে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে ধরে। যে ব্যক্তির কাছে রৌশনারা শিশু বিক্রি করতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, তিনি এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার দুপুর থেকেই ওই বাচ্চাটিকে কেনার জন্য রৌশনারা চাপ দিচ্ছিল। বাড়িতে স্ত্রীকে পইপই করে বলে গিয়েছিলাম, অন্যের সন্তান আমরা বেআইনি ভাবে নেব না। কিন্তু, আমার না থাকার সুযোগে রাতে আবার এসে ওই শিশুটিকে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়।’’

পুলিশের দাবি, প্রথমে রৌশনারা শিশুটিকে তার মামাতো বোনের মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। সে দাবি করে, ওই পরিবার গরিব। তাই শিশুটিকে স্বচ্ছল পরিবারের হাতে তুলে দিতে চাইছেন তাঁরা। তবে তদন্তে নেমে অন্য কাহিনি বেরিয়ে আসে। পুলিশ জানতে পেরেছে, রবিবার সকালে মেমারির এক নাবালিকা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ওই শিশুটিকে জন্ম দেয় মহাজনটুলির নার্সিংহোমে। সদ্যোজাতটিকে অনাথ আশ্রমে দান করার জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানান ওই নাবালিকার মা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সদ্যোজাতটিকে আয়া, কাঞ্চননগরের বাসিন্দা সন্ধ্যা মিত্রের হাতে তুলে দেয়। দুপুরের পরে ওই আয়া আবার রৌশনারাকে শিশুটিকে বিক্রি করার জন্য দেয়।

পুলিশের দাবি, বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ারই শেখ বাপি তাদের জানিয়েছেন, ওই সদ্যোজাতটিকে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় সন্দেহজনক ভাবে এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন রৌশনারা। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাতটিকে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করে নেন তিনি। বাপির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ দুই আয়াকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করে নার্সিংহোমের মালিক সাধনের নাম উঠে আসে।

child selling racket Burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy