মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হয়েছে এক চাকরিহারা শিক্ষকের। প্রবীণ কর্মকার নামে ওই শিক্ষক বছর তিনেক ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। ডায়ালিসিসও চলছিল তাঁর। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল সূত্রে খবর, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয়েছে প্রবীণের। তাঁর মৃত্যুর প্রসঙ্গ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে তুলে ধরেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র সদস্যেরা। পাশাপাশি, নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারের উপর আরও চাপ বৃদ্ধিও করতে চাইছেন তাঁরা। দ্বিতীয় বার কেন পরীক্ষা দিতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার শিয়ালদহ থেকে অর্ধনগ্ন হয়ে নবান্ন অভিমুখে মিছিলের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
প্রবীণের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জের হরিদাসনগরে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি পান তিনি। অমুইপাড়া উদ্বাস্তু বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতা করতেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি গিয়েছে, সেই তালিকায় ছিলেন প্রবীণও। দাবি করা হচ্ছে, গত বেশ কয়েক দিন ধরে প্রবীণ দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, চাকরি যাওয়ার ফলে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। এই দুশ্চিন্তার মধ্যেই ‘স্ট্রোক’ হয়ে ওই প্রবীণের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনরত শিক্ষকদের।
মুর্শিদাবাদের ওই চাকরিহারার মৃত্যুতে সরব হয়েছে ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’ও। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর দাবি, মৃতের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজনের চাকরি দিতে হবে।
রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে একটি ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিল করা হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টে গ্রীষ্মাবকাশ চলার কারণে রাজ্যের ওই আবেদনের কোনও অগ্রগতি হয়নি। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই আর নতুন করে পরীক্ষা দিতে চাইছেন না। আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, তাঁরা ‘যোগ্য’। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কেন আবার পরীক্ষা দেবেন? এই নিয়ে শুক্রবার ফের রাস্তায় নামছেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন:
শিয়ালদহ থেকে নবান্ন অভিমুখে অর্ধনগ্ন মিছিলের ডাক দিয়েছেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র সদস্যেরা। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, উদ্ভূত পরিস্থিতি তাঁদের ‘নগ্ন’ করে ছেড়ে দিয়েছে। সেই কারণেই প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে অর্ধনগ্ন হয়ে মিছিল করতে চান তাঁরা।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের বক্তব্য, তাঁদের যাতে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়, সেই বিষয়টি দেখতে হবে সরকারকে। নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান আন্দোলনকারীরা। সেই কারণেই শুক্রবার নবান্ন অভিমুখে মিছিল করবেন তাঁরা। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সকালেই ছ’জন চাকরিহারা শিক্ষক কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন চত্বরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দিতে গবে। কিন্তু বৈধ অনুমতিপত্র না-থাকায় তাঁদের আটক করে পুলিশ।